Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈদ্যুতিক খুঁটি বহাল

সড়কের বিপজ্জনক খুঁটি সরাতে হাইকোর্টের

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নির্দেশ কার্যকরের উদ্যোগ নেই
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা, কুমিল্লা থেকে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সড়কের ওপর ১৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি যানবাহন চলাচলে দীর্ঘদিন বিঘœ ঘটালে ওইসব খুঁটি মহাসড়ক থেকে সরানোর কোন উদ্যোগ নেই বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। অথচ এইসব খুঁটির কারণে মহাসড়কের ওই এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে। এছাড়াও অতি উচ্চ ভোল্টেজের তার টানা বড় বড় এই খুঁটিগুলো স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ভীতিকর। ওই এলাকার বাসিন্দারা খুঁটিগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য দাবি জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি, এমনকি মানববন্ধনও করেছেন। সরকারের সড়ক বিভাগ এই বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে, তারা সেগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সেগুলো সড়ক থেকে সরানো বিরত রয়েছে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ করেছেন।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কের ওপর ১৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো মহাসড়কের পাশেই ছিল। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্ত করার কারনে খুঁটিগুলো মহাসড়কের মাঝখানে পড়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল কবির ইনকিলাব বলেন, মহাসড়কে যানবাহন ও লোকজনের চলাচলের জন্য যেমন আমাদের সড়ক প্রয়োজন, তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন ও তার খুঁটি স্থাপনেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু করার আগেই খুঁটিগুলো সরিয়ে অন্য কোথাও স্থাপন করা হলে এখন আর কোন সমস্যা হতো না বলে জানান।
গাড়ি চালকেরা জানান, সড়কের কিছু অংশে চওড়ার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরানোয় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কেফায়েত উল্লা নামের এক বাস চালক ইনকিলাবকে বলেন, ভয়ে থাকি কোন সময় খুঁটি গাড়ির উপরে ছিটকে পড়ে যায় কিনা। খুঁটিগুলো দ্রæত যথাস্থানে সরিয়ে নিলে আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারতাম। নতুবা আমরা আতঙ্কে থাকি।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের সোনারগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, মহাসড়কের ওপর যেসব বৈদ্যুতিক খুঁটি আছে, সেগুলো খুব শ্রীঘরই সরানোর ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের দুইপাশ বিদ্যুতের খুঁটি রেখে মহাসড়ক দখল করে রেখেছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এমনকি মহাসড়কেই চলছে খুঁটি উঠা-নামানোর কাজও। এতে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। খুঁটি অপসারণে সড়ক পরিবহণ ও জনপথ বিভাগ এবং পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
মহাসড়কে খুঁটি উঠানামানোর কাজ চলায় ছোট হয়ে যায় যানবাহন চলাচলের পথ। ভারী খুঁটিগুলো ট্রাক থেকে নামানোর সময় অধিক স্থান প্রয়োজন হওয়ায় দু’পাশের গাড়ি আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। খুঁটি উঠানো-নামানোতে চলাচলরত গাড়ি যথাসময়ে ব্রেক না করলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিদু্যুৎ বিভাগের এমন অব্যবস্থাপনায় আতঙ্কে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। এই সড়কে আলমগীর নামের এক লেগুনা চালক বলেন, রাস্তার পাশে খুঁটি রাখার কারণে রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে খুঁটি উঠানো নামানো হয়। এতে রাস্তা ছোট হয়ে যায়। ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকির ব্যাপার। দেখে না চালালে খুঁটির ধাক্কায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
এদিকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার প্রধান সড়কের মাঝপথে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকলেও তা সরানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কুমিল্লার চান্দিনায় এক কিলোমিটার সড়কে ৭ টি বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এইসব খুটি পৌর কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের পরও তা অন্যত্র সড়াতে গড়িমসি করছে পল্লী বিদু্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক থেকে ৭টি বিদ্যুতের পোল না সরিয়েই চলছে সড়ক স¤প্রসারণের কাজ। এতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে পথচারীরা। অথচ উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চান্দিনা বাজার অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫ টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে এই সড়কে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, হাসপাতাল, ক্লিনিক, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শনি ও মঙ্গলবার হাটের দিন থাকলেও সপ্তাহের সাত দিনই ব্যস্ত থাকে উপজেলা সদরেরর এই বাজারটি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক এলাকায় জনগণের সুবিধার জন্য স¤প্রতি রাস্তার দু’পাশে পয়ঃনিষ্কাশন নালাসহ রাস্তা স¤প্রসারণ নির্মাণ কাজ করেছে চান্দিনা পৌরসভা। রাস্তা নির্মাণ কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এতে করে এক কিলোমিটার রাস্তার সীমানায় উপর বিচ্ছিন্নভাবে রয়ে গেছে পল্লী বিদ্যুতের ৭টি খুঁটি। চান্দিনা থানার পালকি সিনেমা থেকে উপজেলার সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানেই দেখা যায় খুঁটিগুলো। যা রাস্তার উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
অপরদিকে, পথচারীদের স্বাচ্ছন্দে চলাচলের জন্য ফুটপাত নির্মাণ করা হলেও তা হকারদের দখলে চলে গেছে। রাস্তার উপর এসব খুঁটি অপসারণ না করায় চলাচলে বিঘœ ঘটছে পথচারীদের। চান্দিনা পৌরসভার মেয়র মো.মফিজুল ইসলাম বলেন, সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে জনসাধারণের জন্য। জনগণের স্বার্থে খুঁটিগুলো অপসারণের জন্য পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাস্তা স¤প্রসারণের কারণে খুঁটিগুলো সড়কের মাঝে চলে আসে। এ বিষয়ের পৌর কর্তৃপক্ষের আবেদন আমাদের কাছে পৌঁছেছে। দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যে স্থাপিত একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি নিয়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল ইসলাম সুমন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন। এ ব্যাপারে তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে সড়কের মধ্যে স্থাপিত সব খুঁটি অপসারণের জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ