Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধু চাষে মধুময় জীবন খোকনের

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
দিগন্তজুড়ে সরষে খেত। পাশেই রয়েছে সারি সারি মৌমাছির বাক্স। ফুলের মধু সংগ্রহ করে মৌ মাছিরা ফিরছে ওই বাক্সে। কিছুক্ষণ পর পর মৌমাছির বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ এলাকার আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে আহসান হাবিব খোকনের খামার। অভাবের সংসারে জন্ম নেয়া খোকনের ছোটবেলা থেকেই প্রবল ইচ্ছে অভাব নামক ব্যাধিকে নির্মূল করা। প্রবাদে আছে “অভাগা যেদিকে যায়, সেদিকে সাগর শুকিয়ে যায়।” খোকনের জীবনের সাথে কথাটি পুরোপুরি মিলে যায়। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে খোকন সবার ছোট। অভাবের সংসারে কোনোরকমে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছি। অভাবের তাড়নায় সবার ছোট হলেও অন্য ভাইদের মতো তাকেও সংসারের হাল ধরতে হয়। বিয়ে করার পর তার সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তখনও তার সংসারে সুখ নামের সোনার হরিণটি ধরা দেয় নি। অভাবে তাড়নায় বহু স্বপ্ন বুকে নিয়ে রাজধানীর একটি ছাপাখানার কর্মচারী হিসাবে কাজ করতে থাকে খোকন। দিনরাত কঠোর পরিশ্রমের ফলে কয়েকবছর যেতে না যেতেই শ্রমিক থেকে একদিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হন। ৬ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে মৌমাছির চাষ বেশ লাভজনক বলে জানতে পারে খোকন। পরে বিসিক থেকে মৌমাছির চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে বানিজ্যিকভাবে মধু চাষ শুরু করেন। আর এ মধু চাষেই ভাগ্য বদলে গেছে তার। মধু চাষেই তার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। জীবন হয়েছে মধুময়।
খোকন জানান, বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর মাত্র ১৬ হাজার টাকা পুঁজিতে মৌমাছি পালনের ৫টি বাক্স কিনে উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের পূবেরগাঁও এলাকায় শুরু করেন মৌমাছির চাষ। ছাপাখানার ব্যবসার পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন মৌমাছির খামারের পরিচর্যা। বর্তমানে খোকনের মৌমাছি পালনের বাক্সের সংখ্যা ২’শ টি। মৌমাছি বসবাসের প্রতিটি বাক্সের ভেতরে সাত থেকে আটটি ফ্রেম থাকে। আর সেই ফ্রেমের মধ্যে মৌমাছিগুলো বাস করে। প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মধু আহরণ করা যায়। বাকি মাসগুলোতে মৌমাছিগুলোকে চিনির সিরাসহ বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে রাখতে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে আহসান হাবিব খোকন সরিষা, ধনিয়া, কালিজিরা, ও লিচু গাছ থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এ চার মাসে বাক্সগুলো থেকে ৪ টন মধু সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। এসময়ে প্রতি বাক্স থেকে গড়ে ৫০-৬০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে মধু সংগ্রহ করতে সরিষার খেত থেকে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মধু সংগ্রহ করেন তিনি। সরিষার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে ধনিয়া, কালিজিরা ও লিচুর মৌসুমে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। তার খামার থেকে উৎপাদিত মধু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজি সরিষা ফুলের মধু ১৮০ থেকে ২০০ টাকা আর কালিজিরা ফুলের মধু ২৫০-৩০০ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। রাজধানীতে ঢাকার বড় বড় দোকানগুলোতেও তার উৎপাদিত মধু বিক্রি হয়। খাঁটি মধু উৎপাদনে ক্রেতাদের কাছে তার রয়েছে বিশেষ সুনাম।
খোকন জানান, ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে মৌমাছির চাষ, মৌমাছি যেসব এলাকায় বেশি থাকে সেসব এলাকায় সরিষা, লিচু, কালিজিরা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফলমূল ও সবজির উৎপাদন অন্যসব এলাকা থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি উৎপাদিত হয়। মৌমাছির কারণে অন্যসব ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের উপদ্রব কমে যায়। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
খোকন বলেন, লখাপড়া শেষ করার পর চাকরির জন্য না ঘুরে মৌমাছির চাষ ঘুচাতে পারে বেকার নামক কলঙ্ক। বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি করতে পারবে অনেক লোকের কর্মসংস্থান।
খোকন জানান, মৌমাছির চাষ করে বর্তমানেতিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখে আছেন। মৌমাছি পালনে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। মৌমাছির চাষে কম মূলধনে বেশি লাভেল সম্ভাবনা রয়েছে। বেকার যুবক প্রতি খোকন বলেন, যারা বেকার যুবক রয়েছেন মৌমাছি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারাও সাবলম্বী হতে পারবেন। মৌমাছি উৎপাদন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করে আসছেন। ইতোমধ্যে খোকনের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেকেই মৌমাছির চাষ শুরু করেছেন। এদের মধ্যে পাবলু, আল-আমিন, সেলিমসহ বেশকয়েকজন তরুন যুবক। তারা এরইমধ্যে স্বল্প পরিসরে মধু চাষ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। মৌমাছির চাষ সরিষা ফসলের জন্য ভালো। এতে করে ফসলের পোকা মাকর অনেকাংশে কমে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আহসান হাবিব খোকনের মধু চাষ দেখে এলাকার বেকার যুবকরা মধু চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ