Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চকবাজার ট্র্যাজেডি জানাল গাড়ির সিলিন্ডারে বিপদ

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

স্টাফ রিপোর্টার
সিএনজিচালিত বাহনের গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার বিধান থাকলেও বেশির ভাগ মালিকই তা মানছেন না বলে অভিযোগ আছে। আর গাড়ির মালিকদের অনীহার কারণে যে বিপদ তৈরি হয়েছে, সেটিরই যেন প্রমাণ দিয়ে গেল চকবাজার ট্র্যাজেডি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০টি সিএনজি কনভার্সন ওয়ার্কশপ রয়েছে। সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচলনের পর গত ১৫ বছরে দেশে আড়াই লাখের বেশি গাড়ি জ্বালানি তেল থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব গাড়িতে সিলিন্ডার রয়েছে চার লাখের বেশি। সবশেষ খবর অনুযায়ী ১৫ বছরে মাত্র ৯৪ হাজার সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়েছে। এ হিসাবে দেশের সড়কে চলাচলকারী গাড়িতে তিন লাখের বেশি সিলিন্ডার এখন পর্যন্ত রিটেস্ট করা হয়নি। অনিরাপদ এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। শেষ তিন বছরে দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনায় পড়ে ১৭৫টি গাড়ি। এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০০ লোকের প্রাণহানি ঘটে।
সিএনজিচালিত যানবাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত সিলিন্ডার প্রতি পাঁচ বছর পর পর পুনঃপরীক্ষার বিধান রয়েছে। সব ধরনের সিলিন্ডারের পুনঃপরীক্ষার অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক অধিদপ্তর। এ ছাড়া যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুনের সূত্রপাত ধরে দুটি গাড়ির মধ্যে পাল্টাপাল্টির পর ধাক্কা লেগে একটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে। গাড়িতে গাড়িতে সংঘর্ষ এর আগেও হয়েছে, কিন্তু এই ধরনের বিস্ফোরণ দেখা যায়নি কখনো। এই বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়া আগুন পাশপাশের বিভিন্ন গ্যাসের সিলিন্ডারে গিয়ে পড়েছে। আর একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার যেন বোমার মতো হয়ে গিয়েছিল। যানবাহনে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কী ফল হতে পারে, তা নিয়ে বারবার আশঙ্কার কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখনও পুনঃপরীক্ষাবিহীন তিন লাখের বেশি গ্যাস সিলিন্ডার ঘুরছে দেশের সড়কগুলোতে।
সিএনজি রূপান্তরসহ সিলিন্ডারের পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে সরকারের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার ও সার্বিক বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। পাশাপাশি আছে গাফিলতিও। যে কারণে দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণের কাজটা ঠিকভাবে করছে না তারা। দুর্ঘটনার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারী যানবাহনের মালিকদের অনীহা ও আন্তরিকতাকেও দায়ী করা হয়েছে।একটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার জন্য দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। আর এ কাজ করতে ২০ থেকে ৪০ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য দুই হাজার টাকা, ৪০-৬০ লিটারের জন্য আড়াই হাজার টাকা, ৬০-৮০ লিটারের জন্য তিন হাজার টাকা এবং ৮০ লিটারের বেশি প্রতিটি সিলিন্ডারের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। গাড়ির মালিকরা নিরাপত্তার এ প্রক্রিয়াকে বাড়তি খরচ ও সময় নষ্ট বলে মনে করেন। এক ধরনের অনীহা থেকেই এ কাজ অবহেলায় পড়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, আমরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা তার মাত্রাটা টের পাই। এবারও সেটাই হয়েছে। সবকিছুই অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে। ফলে গাড়ি বাড়ছে, গাড়ির মালিক বাড়ছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য একদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ নেই। আবার সরকারও তাদের প্রয়োজনীয় লোকবল দিতে পারে না। দীর্ঘ দিনের এমন অবহেলা ও অযতেœই এখন অহেতুক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ