Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আদালতের রায় বাংলায় লিখুন : প্রধানমন্ত্রী

আহতদের চিকিৎসার ত্রুটি হবে না

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আদালতের রায় বাংলায় লিখতে বিচারকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আদালতের রায় লেখার সময় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারেও জোর দিয়েছেন তিনি। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাস্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাস্ডের ঘটনায় যারা হাসপাতালে রয়েছেন তাদের চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হবে না। যারা আহত হয়ে বেঁচে আছেন তাদের চিকিৎসা চলছে। তাদের চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অমর একুশে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। সেই রায়ে কি বলা হল তা বুঝতে অনেক বিচার প্রার্থীকে নির্ভর করতে হয় আইনজীবীর ওপর। তিনি (আইনজীবী) যা বোঝাবেন তাই সে বুঝবে, নিজে পড়ে জানার কোনো সুযোগ তার থাকে না। ফলে অনেক সময় তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় অথবা তাকে একটু অন্যভাবে ব্যবহারও করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলব, আদালতের রায়টা যদি কেউ ইংরেজিতে লিখতে চান লিখতে পারেন। কিন্তু একটা শর্ত থাকবে, এটা বাংলা ভাষায় প্রচার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং যিনি রায় পাবেন তিনি যেন পড়ে জানতে পারেন। আর ইংরেজিতে যে রায় লেখা হবে, তা যেন একটু সহজ ইংরেজিতে লেখা হয়, সে বিষয়ে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, যে ভাষা আমরা সবাই বুঝতে পারি, সেই ভাষায় লেখা উচিত। আর বাংলায় রায় লিখে সেটা ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করেও দিতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ রয়েছে, সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালতসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। ওই আইনের তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।
বর্তমানের আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলায় মামলার রায় লেখা শুরু করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরও তা চালু রেখেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশও রায় বাংলায় দিতেন।
মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আমাদের যারা আদালতে আছেন, তারা যদি মাতৃভাষায় লেখার অভ্যাসটা করেন, সেটা অন্তত আমাদের মতো সাধারণ মানুষ, তাদের খুব সুবিধা হবে রায়টা পড়ে বোঝার। বাংলা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, মাতৃভাষা জানাটা সবার জন্য অপরিহার্য। তবে বিশ্ব এখন গেøাবাল ভিলেজ। আমাদের ভাষাগতভাবে যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু নিজের ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে একটা দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষা নেয়। কাজেই সে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে কিন্তু অন্য ভাষা শেখার সুযোগ আমাদের দেশেও আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতেই সরকারের তরফ থেকে পৃথিবীর নয়টি ভাষা নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তার মাধ্যমে কিন্তু মানুষ অনেক ভাষা শিখতে পারে। ইংরেজি সারা বিশ্বে একটা মাধ্যম হয়ে গিয়েছে। কাজেই আমাদের দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে সেটা শিখতে পারে। সাথে সাথে বাংলা ভাষা মাতৃভাষা, যে ভাষার জন্য আমরা জীবন দিয়েছি সেই ভাষাটাও সবাই যাতে শেখে সেই ব্যবস্থাটাও করা একান্তভাবে প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে একেক অঞ্চলে একেক ধরনের কথা বলি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা অফিসিয়াল একটা ভাষা ব্যবহার করি। যে ভাষাটা প্রমিত বাংলা। এরইমধ্যে আমাদের বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে। সেজন্য বাংলা একাডেমিকেও ধন্যবাদ জানাই। একটা সুষ্ঠুভাষা যেটা প্রচলন থাকবে। তিনি বলেন, আমরা যারা আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করি সেটাকে একেবারে বাদ দেয়া ঠিক না। বাদ দিলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই থাকে না।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ