Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবহাওয়া পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার হুমকি

‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড় জলোচ্ছ্বাস এবং মৌসুমী বন্যা মানুষের জীবন জীবিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এ বিষয় কারো কোন সন্দেহ থাকে, তাদেরকে আমি বাংলাদেশে এসে প্রকৃত অবস্থা দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কাজ করার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রাতে জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনা এবং অর্থায়ন রয়েছে। আমাদের এখন কেবল প্রয়োজন সমাজের সর্বত্র ধনিক শ্রেণীর সদিচ্ছা, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট পরিচালক হানস জোয়াসিম সভাপতিত্ব করেন। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফর ফরেন এফেয়ার্স এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব কেনিয়া মনিকা জুমা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনি ইরিকসন সরিডি, ইউএস সিনেটর সেলডন, হোয়াইট হাউস এন্ড কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব গ্রীনপিস ইন্টারন্যাশনাল বুন্নি ম্যাকডিয়ারমিড প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ডয়চে ভেলের চিফ পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্ট বার্লিন ম্যালিন্ডা ক্রেনি রোর্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
২০১২ সালে ইউএনজিএ সিদ্ধান্তের বিষয় পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় সমষ্টিগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্র্তনের আরো অনেক হুমকির কারণে লাখ লাখ মানুষ পৈতৃক ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, নদী ভাঙন, লবণাক্ত পানি এবং ভূগর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিকের মিশ্রণের কারণে এসব ঘটছে।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে পানিতে অ্যাসিডিটি বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্ছতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতে অনিয়ম এবং অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ুর এসব চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও বাংলাদেশ বিশ্বে চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং হর্টিকালচারে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কাছে যাদুকরী পরিবেশবান্ধব পাটের আাঁশ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব উদ্যোগে বৈরী অবস্থায় টিকে থাকার উপযোগী শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছি।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা এখন বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি; আমাদের অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারব কি না? বিগত এক দশক ধরে তিনি কোপেন হেগেন, নিউইয়র্ক, কিউবা ও ইসা-শিমার বৈশ্বিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
আইডিইএক্স মেলায় প্রধানমন্ত্রী
জার্মানির মিউনিখে ৩ দিনের সরকারি সফর শেষে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে আইডিইএক্স-২০১৯ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার সকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিভিশন সেন্টারে (এডিএনইসি) মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এসময় তাকে স্বাগত জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর উপ সর্বাধিনায়ক ক্রাউন প্রিন্স শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
এর আগে মিউনিখ সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ২টা ৪০ মিনিট ) মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবু ধাবি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ‚ত মোহাম্মদ ইমরান প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনার পর প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্টানিক মোটর শোভযাত্রা সহকারে আবু ধাবির সেন্ট রেজিস হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমিরাতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা এখানেই অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই আমিরাতের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মকতুমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এছাড়া অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
শেখ হাসিনা আল বাহার প্রাসাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের পত্মী শেখ ফাতিমা বিনতে মোবারক আল কেতবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী সেন্ট রেজিস আবুধাবি হোটেলে একটি কমিউনিটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দেশে ফিরবেন।#



 

Show all comments
  • Md. Shafiqur Rahman ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    জলবায়ূ পরিবর্তনে কারণে সবার যার যার অবস্থান থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জনগণকে অবদান রাখলে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • N Fattah ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    Thank you.
    Total Reply(0) Reply
  • তন্ময় ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিরোধীমতের দমন না করে এদিকে মন দেওয়া। এতে ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার চাইতে দীর্ঘায়ু বাসযোগ্য এক বিশাল পৃথিবী পাওয়া যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হৃদয় আজিজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    না, আবহাওয়ার চেয়ে আওয়ামী লীগ দেশের জন্য বড় হুমকি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গুরুত্বের সাথে সরকারের কাজ করা উচিত। বিরোধীদের দিকে নজর না দিয়ে জলবায়ু নিয়ে কাজ করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ