পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের উদ্যোগে সমগ্র দেশে একশ’ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই হচ্ছে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক জোন। মীরসরাইতে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশেষায়িত শিল্প জোন। কর্ণফুলী নদীঘেঁষে গড়ে তোলা হবে এক লাখ টনী জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের সক্ষমতায় দেশের বৃহত্তম ডক ও শিপইয়ার্ড। সমুদ্রবন্দর, শিল্প, কল-কারখানার নগরী চট্টগ্রাম। চলমান মেগাপ্রকল্প ও মাঝারি প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক জোনের হাত ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে শিল্পবিপ্লব হাতছানি দিয়েছে। চট্টগ্রামে দু’টি ইপিজেড ও বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য কোনো জায়গাই অবশিষ্ট নেই দীর্ঘদিন। শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী শিল্প প্লটের অভাবে ‘বিনিয়োগের আদর্শ স্থান’ খ্যাত চট্টগ্রামে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন দীর্ঘদিন যাবৎ স্থবির হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মাঝে বিরাজ করছিল বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে হা-হুতাশ।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত ২০০৮ সাল থেকে সমন্বিত পরিকল্পনা সহকারে অগ্রসর হয়। যার ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন, বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বিগত সরকারের সফল পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি। যিনি এবার নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী। নিজের তৈরি পথরেখা বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব এখন অর্থমন্ত্রীর। যার জন্য অপরিহার্য দেশী-বিদেশী ব্যাপক বিনিয়োগের। অবশ্য ইতোমধ্যে সাড়াও মিলছে সন্তোষজনক পর্যায়ে। বর্তমান সরকারের উদোগে দেশে একশ’ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, অর্থনৈতিক জোনসমূহ দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির পথচলা ত্বরান্বিত করবে। এরফলে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান গতিশীল হবে। বাণিজ্য ও শিল্পায়ন অর্থনৈতিক উন্নতির সোপান।
মাতারবাড়ী জ্বালানি কেন্দ্রকে ঘিরে মহেশখালী দ্বীপে বেজা কর্তৃপক্ষ ৫টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করবে। তাছাড়া সর্বদক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফে সাবরাং অর্থনৈতিক জোন, জালিয়ার দ্বীপ অর্থনৈতিক জোন, টেকনাফ ও সোনাদিয়ায় বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র এবং বিশ্বমানের ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং দেশের নামকরা ব্যবসায়ী-শিল্পগ্রুপগুলো বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ছাড়াও পটিয়া ও বাঁশখালীর মুখে শংখ নদীর তীরে শিল্পজোন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল এবং কালুরঘাটে কর্ণফুলী নতুন রেলসেতু নির্মিত হলে সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিস্তার লাভ করবে শিল্প-কারখানা। বর্তমানে আনোয়ারা-পটিয়ায় স্থাপিত কোরিয়ান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের কেইপিজেডে বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্ণফুলীর তীরে চট্টগ্রাম বন্দরের বিপরীত দিকে মেরিন একাডেমির পাশে দেশের সর্ববৃহৎ শিপইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী ড্রাই ডক স্পেশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা এই প্রকল্পের উদ্যোগটি নিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক হাজার ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। আগামী মার্চ মাসে জেটি-বার্থ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রাথমিকভাবে সেখানে প্রায় ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
সরকারের উদ্যোগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আদলে এই ইয়ার্ডে এক লাখ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ মেরামত করা যাবে। তাছাড়া বড়সড় আকৃতির জাহাজ নির্মিত হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থিত একমাত্র সরকারি ড্রাইডক চিটাগাং ড্রাইডকে ১৮ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বড় আকারের জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামতের উপযোগী অবকাঠামো সুবিধা নেই। নতুন ইয়ার্ডে বৃহাদাকার জাহাজ নির্মাণ, মেরামত ছাড়াও রফতানি সম্ভাবনা কাজে লাগানো হবে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বার্ষিক অন্তত ১২ কোটি ডলার রফতানি আয় আসবে।
কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীর আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক জোনের কাজ স্থবির থাকার পর আবারো সচল হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসে বেজা’র সাথে চীনের যৌথ কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ-চীন যৌথ কোম্পানিই আনোয়ারা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন করবে। সেখানে বড় ধরনের চীনা বিনিয়োগ আশা করছে সরকার। ২০১৬ সালে আনোয়ারায় চায়না অর্থনৈতিক জোন প্রকল্পে চীন ২৮ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা প্রদানে চুক্তি করে। সেখানে ৭৮৩ একর জমিতে বাস্তবায়ন করা হবে চীনা জোন। নির্মিত হবে বিভিন্ন ধরনের পৌনে ৪শ’ শিল্প-কারখানা। চীনের তুলনায় জমি ও শ্রমিক মজুরি অনেক সুলভ হওয়ায় চীন থেকে শিল্প-বাণিজ্য রি-লোকেট (স্থানান্তর) করারও সুযোগ তৈরি হবে।
মীরসরাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। গতবছর ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল মেগাপ্রকল্প আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম ধাপে প্রায় ১৫ হাজার একর চর ও উপকূলীয় জমিতে শিল্প-কারখানার অবকাঠামো সুবিধা গড়ে তোলা হচ্ছে। চায়না হারবার কোম্পানির বিশেষজ্ঞগণ ঢেলে সাজাচ্ছেন শিল্পাঞ্চল ও যোগাযোগ অবকাঠামো। গ্যাস পাইপলাইন, একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, সড়ক, বন্দরের জেটি-বার্থ সুবিধা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে দিনে দিনে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, প্রকল্পস্থলের কাছাকাছি বন্দর অবকাঠামো সুবিধা তৈরির উপযোগী জায়গাগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীন, ভারতসহ বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানি এবং দেশীয় নামকরা শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রায় এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অর্থনৈতিক জোনসমূহ, বিদেশী বিনিয়োগপুষ্ট বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলগুলোতে উৎপাদিত হবে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী। যার বেশিরভাগই বিশ^বাজারে রফতানি করা হবে। এরমধ্যে থাকছে ওষুধ ও পেটেন্ট সামগ্রী, তৈরিপোশাক, সিরামিকস, সিমেন্ট, মেলামাইন সামগ্রী, কাঁচ শিল্পজাত পণ্য, জাহাজ ও নৌযান, স্টিল ও লোহাজাত সামগ্রী, খেলনা, স্পোর্টস পণ্যসামগ্রী, বাই-সাইকেল, পাদুকা শিল্প, খুচরা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, তথ্যপ্রযুক্তির পণ্যসামগ্রী, ইলেকট্রিকস ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী, কাগজ শিল্প, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পজাত পণ্য, জুস, সৌখিন গৃহস্থালী পণ্য, আসবাবপত্র, উপজাতীয় হস্ত ও কুটির শিল্প সামগ্রী ইত্যাদি।
উৎপাদিত এসব পণ্যসামগ্রী ও সেবাখাতের পণ্য রফতানির বিশাল বিস্তৃত বাজার চাহিদা রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ছাড়িয়ে এমনকি চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।