Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

কাল মন্ত্রণালয় পরির্দশন প্রধানমন্ত্রীর

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কাল রোববার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ে আসার একদিন আগেই ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মতো পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে স্বারক্ষলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশন। গতকাল শুক্রবার দাবি সম্মিলিত এ চিঠি দেয়া হয়েছে বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন। সারাদেশে দুই শতাধিক পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ৬৪ মাসের বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আদায়ে দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে এসব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন করলেও তারা এখনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশে ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে দুই শতাধিক পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬৪ মাসের বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। পৌরসভাগুলোর প্রায় ৩৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে বছরে প্রয়োজন ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। এই অর্থের শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি অংশ পরিশোধ করার কথা পৌরসভার নিজস্ব আয় থেকে। কিন্তু নিজস্ব আয় পর্যাপ্ত না থাকায় সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেওয়ার সামর্থ্য অধিকাংশ পৌরসভার নেই। বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। অর্থাভাবে অবসরের পর প্রাপ্য অর্থও পরিশোধ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন পৌরসভার ৭৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন। তাদের অবসরকালীন ভাতা পরিশোধ করতে প্রয়োজন ১২৫ কোটি টাকা। শতাধিক পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না ৬৪ মাসের বেশি সময়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের ৫৫ থেকে ৫৬ মাসের বেতন বকেয়া। পৌরসভায় সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত (নিয়মিত বেতন) ২ জন কর্মকর্তা এবং ৩২ জন কর্মচারী রয়েছেন। দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে ৯৪ জন। তারা সর্বশেষ বেতন পেয়েছেন গত বছর। পৌরসভার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৮ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
আগের বেতন স্কেল অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ব্যয় হতো ৩৫৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে সরকার নতুন বেতন স্কেল চালু করলে বেতন-ভাতা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাড়াতে হয় চুক্তিভিত্তিক ও মাস্টাররোলে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতনও।
স্থানীয় সরকার ( পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ৫ ধারায় পৌরসভাকে সরকারের একটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আইনের ৯১ (৪-এর ক) ধারায় বলা আছে, পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা এর তহবিল থেকে দিতে হবে। তবে স্থানীয় সরকারের আরেক প্রশাসনিক ইউনিট ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে বেতনের ২৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ বাকি ৭৫ শতাংশ। একই ধরনের প্রশাসনিক ইউনিট হলেও বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড.তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, পৌরসভা গুলোকে পরিকল্পনা নিয়ে কঠোর পরিবীক্ষণের মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়ন করে আয় বাড়াতে হবে। বেতন-ভাতা না হওয়া অবশ্যই অমানবিক বিষয়।
বগুড়ার আরেক পৌরসভা গাবতলীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া। পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভায়, খাগড়াছড়ির রামগড় ও নোয়াখালীর কবিরহাট, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, দিনাজপুরের হিলি, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেতন বকেয়া রয়েছে।
পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলীম মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, পৌর কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শাস্তি দেয় সরকার আর বেতন দেয় পৌরসভা। সরকারি কর্মচারী হয়েও তাঁরা আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ম.ই তুষার ইনকিলাবকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসছেন।এ জন্য একদিন আগেই ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মতো পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে স্বারক্ষ লিপি দিয়েছি। এছাড়া ৪/৫ বছর ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সারা পাচ্ছি না। এবার নতুন মন্ত্রী আমাদের প্রতি সারা দিবে এ আশা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ