Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোখের বদলে চোখ নেওয়ার হুমকি আরাকান আর্মির

সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আরাকান আর্মির সহ-প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং গত বুধবার রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের উদ্দেশে প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় মন্তব্য করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চলা সংঘাত উত্তর রাখাইন থেকে আরও বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সেনাবল বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করে হয়েছে, আরাকান আর্মির এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাধারণ আরাকানিদের নিপীড়ন করলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে যথাযথ জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভিডিওবার্তায়। তার ভাষায়, আরাকান আর্মি ‘চোখের বদলে চোখ’ নেবে। ভিডিওবার্তায় তিনি আরাকান আর্মির ‘উদ্দেশ্য’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন: রাখাইনে আরাকান আর্মি ছাড়া আর কোনও সেনাবাহিনী থাকবে না। বৌদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি, হয়রানি এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতের সূত্রে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হচ্ছে রাখাইনের বেসামরিক বৌদ্ধ অধিবাসীদের। বার্তা সংস্থা এএফপি ২৫ জানুয়ারিতে হওয়া সংঘর্ষের পর তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল, যে বৌদ্ধরা মাত্র ১৮ মাস আগেই রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে, বৌদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও আজ তাদেরকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে।
আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অংয়ের ভিডিওবার্তাটি ধারণ করা হয়েছে আরাকান আর্মির ঘাঁটি কাচিন প্রদেশের লাইজাতে। তিনি দাবি করেছেন, তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) শত শত সেনা সদস্য হারিয়েছে। সম্মানহানির ভয়ে তারা হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে না পেরে এখন তারা আরাকানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেবে। তারা রাখাইনে সেনাবল বৃদ্ধি করেছে। ফলে সংঘাত উত্তর রাখাইন পেরিয়ে আরও বেশি এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানিদের ক্ষতি করলে আরাকান আর্মি ‘চোখের বদলে চোখ’ নীতি অনুসরণ করবে।
আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং সংঘাত প্রবণ এলাকাগুলোর যেসব বাসিন্দারা বাইরের এলাকায় গেছেন বিভিন্ন কাজে তাদেরকে ঘরে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং বলেছেন, ‘যারা বাড়িঘর ছেড়ে দূরে থাকছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য বাড়ি ফিরুন। জীবনের চেয়ে বড় আর কোনও কিছুই নয়। বেঁচে থাকলে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু অর্থ দিয়ে জীবন কিনতে পাওয়া যায় না।’
ভিডিওবার্তায় তিনি সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে চলাফেরা করার বিষয়ে সাধারণ নাগরিকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তার ভাষ্য, নারী ও বৃদ্ধদের একা একা থাকা উচিত নয়; আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা উচিত। তিনি সাধারণ আরাকানিদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহনে না চড়ারও পরামর্শ দেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহনে কোনও সাধারণ নাগরিক থাকা অবস্থায় আরাকান আর্মি হামলা চালালে মারা পড়তে পারেন তারা। আর এমন ঘটনা ঘটলে মিয়ানমার আর্মি পরবর্তীতে দাবি করবে, আরাকান আর্মি সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করে।
ভবিষ্যতেও আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি বার্তা পাঠানো হবে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং বলেছেন, আরাকানিদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপপ্রচারমূলক বার্তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাতমাদাও ষড়যন্ত্র করে বিভ্রান্তিকর অনেক গুজব ছড়ায়।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও সংখ্যাগুরু বামারদের চেয়ে নৃতাত্তি¡ক পরিচয়ে ভিন্ন রাখাইনের আরাকানিরা। নিজেদের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চাওয়া মিয়ানমারের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি। আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে প্রায় এক দশক আগে শুরু হয় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। স¤প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরাকানি গ্রামবাসীদের হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত। স¤প্রতি রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী উ নি পু আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের অনুমতি দিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নতুন ঘটনা নয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধন। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় নিধনের শিকার হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে। এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে।



 

Show all comments
  • jack ali ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৭:১৪ পিএম says : 0
    Oh Arakan Army--defeat the Burmis Barbarian and destroy them fore ever----
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ