পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন ও জনবান্ধব হতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পুলিশের হাতে কোনো নিরীহ মানুষ যেন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতেও বলেছেন তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশের প্রত্যেক সদস্যের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে জনবান্ধব পুলিশে পরিণত হবে- এটাই আপনাদের কাছ থেকে আমি আশা করি। আমরা চাই, আমাদের পুলিশ বাহিনী হবে জনবান্ধব পুলিশ। সেভাবে আপনারা নিজেদের গড়ে তুলবেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অনুষ্ঠানস্থলে এলে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরকে পুলিশের একটি সুসজ্জিত ঘোড়সওয়ার শোভাযাত্রা স্বাগত জানায়। প্যারেড গ্রাউন্ড এলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় পুলিশের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। খোলা জিপে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন করেন। পরে প্যারেড কমান্ডার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার নেতৃত্বে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীকে এইটুকু বলব, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আপনাদের যে কথা বলেছেন, আপনারা বাংলাদেশেরই বিভিন্ন পরিবার থেকে এসেছেন- আজকে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা থাকা মানে হচ্ছে আপনাদের পরিবারের সদস্যদের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটা বিষয় লক্ষ রাখবেন, আপনাদের হাতে কোনো নিরীহ জনগণ যেন নির্যাতনের শিকার না হয় বা কোনো রকম হয়রানির শিকার যেন না হয়; বরং কোনো হয়রানি হলে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা এটা আপনাদের কর্তব্য। এটাই জনগণ আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে ক্রাইমেরও ধরন পাল্টে যাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদেরকেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সবপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ক্যাডার কর্মকর্তাসহ সব পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যাওয়ার আগেই বুনিয়াদি ও মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের আমরা ব্যবস্থা করছি। এই প্রশিক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাদক নির্মূলের যে অভিযান আমাদের চলমান, এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা একান্তভাবে প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জরুরি সেবা (ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ) প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে, মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পুলিশের অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদান, মোবাইল অ্যাপস প্রবর্তন এবং তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে বিভিন্ন সফটওয়্যার সংযোজন ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম ও সমসাময়িক অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ সদস্যদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে ব্যয় হিসেবে ধরি না, জনগণ সেবা পাচ্ছে বলেই আমরা ধরে নেই। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, বিগত দিনে বিভিন্ন আন্দোলনের সহিংসতা দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনে গতকাল সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং সেবামূলক কাজের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পান ৩৪৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদক পরিয়ে দেন।
এ ছাড়া অভিযান পরিচালনাকালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিনকে এবং ২০১৫ সালে রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমায় আহত হয়ে মারা যাওয়া ডিএমপির কনস্টেবল শামীম মিয়াকে মরণোত্তর বিপিএম পদক দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এই বাহিনীতে লোকবল বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সে সময় প্রতি এক হাজার ৩৫৫ জন মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। সেটি বেড়ে এখন প্রতি ৮০১ জনের বিপরীতে একজন হয়েছে। ভবিষ্যতে চাহিদা, জনসংখ্যার অনুপাত ও ভৌগোলিক আয়তনসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে পুলিশের জনবল আরো বৃদ্ধি করা হবে। অনুষ্ঠানে বার্ষিক কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ, বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের পদক বিতরণ, নারী পুলিশ কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেড ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
পদক পেলেন ৩৪৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা
২০১৮ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ বাহিনীর ৩৪৭ জন সদস্য ও দুই নিহত পুলিশের পরিবারকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল(বিপিএম), বিপিএম(সেবা), প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক(পিপিএম) ও পিপিএম(সেবা) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সকালে পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে তাদের মেডেল পরানো হয়।
পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪০ জন বিপিএম ও ৬২ জন পিপিএম পদক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ১০৪ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম- বো এবং ১৪৩ জন পিপিএম- সেবা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জন মরণোত্তর বিপিএম পদক পাচ্ছেন। তারা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ও ঢাকা মেট্্র্রাপলিটন পুলিশের সাবেক কনস্টেবল শামীম মিয়া। তাদের পরিবারের সদস্যদের মেডেল পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।