Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শনিবারের সন্দেশ শহুরে জীবনকে সবুজে নিতে আরিফুলের চেষ্টা

মো. শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাবা আইনুল হক নার্সারী ব্যবসায়ী। কিন্তু পড়াশুনা বাদ দিয়ে সন্তান একই পেশাতেই থিতু হবেন তিনি এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করেননি। ফলে তার চোখ আড়াল করেই বাসার ছাদে পানির ট্যাঙ্কির পেছনে খর্বাকৃতির বৃক্ষ বনসাই তৈরিতেই বিভোর থাকেন ছেলে আরিফুল।
হাতে তখন সাকুল্যে সম্বল টিফিনের টাকা থেকে জমানো দুই হাজার ১০০ টাকা। সেই টাকায় কেনা এই ‘জীবন্ত শিল্পকর্ম’ তৈরি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা আয় করেছেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ। ময়মনসিংহ শহরজুড়ে বনসাইপ্রেমী হিসেবে তার আলাদা একটি পরিচিতিও গড়ে ওঠেছে।
আরিফের সবুজের সংসারে রয়েছে ৮ ইঞ্চি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক লাখ টাকা দামের বনসাই। তার স্বপ্ন প্রতিটি বৃক্ষপ্রেমি মানুষের হাতে বনসাই পৌঁছে দেয়া। সব নার্সারী মালিকদের একীভূত করে বনসাই সোসাইটি গড়ে তোলা। যান্ত্রিক শহুরে জীবনকে সৌন্দর্যে সবুজে সবুজে ভরিয়ে তোলা।
মাসব্যাপী ময়মনসিংহ পুষ্পমেলায় বাবার ‘ফাইভ স্টার নার্সারীতে’ চায়না, পাকুড়, দেশী বট, থাই বট ও কাঁঠালি বট প্রজাতির বনসাই নিয়ে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। সর্বনিম্ন চার হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বনসাই রয়েছে স্টলে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর গন্টির বাসার ছাদে বনসাই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন আরিফ। বনসাইয়ের প্রেমে পড়ার গল্প সংক্ষিপ্ত আকারে শোনালেন। তিনি বললেন, বনসাই তৈরির কাজ হাতে-কলমে বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন। কিন্তু বাবা চাইতেন না আমি বনসাই নিয়ে কাজ করি।
২০০৭ সালের দিকে আরিফুল নিজের টিফিনের টাকা থেকে জমানো দুই হাজার ১০০ টাকা নিয়ে বনসাই নিয়ে কাজ শুরু করেন। ওই সময় ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৯ পিস, বগুড়া থেকে ৬ পিস ও যশোর থেকে ১২ পিস ছোট বনসাই চারা সংগ্রহ করেন। এরপর শিকড় কাটা, গাছটাকে বাঁকানো এবং বড় গাছের আকৃতি আনার জন্য গাছের ডালে সিলভার বা তামার তার পেঁচানো, গাছকে ছেঁটে ন্যাড়া করতে, ড্রয়িং করে সার-খাবার দেয়া সব কাজই একাই করেছেন।
তিনি জানান, শুরুতে গাছের সংখ্যা ছিলো ১৩ পিস। বর্তমানে অ্যাডুনিয়াম, বাগান বিলাস, পলাশ, দেশি ভেল, পাকুড়, কাঁঠালি বট, হরতকিসহ প্রায় ১৮ জাতের বনসাই সংগ্রহে রয়েছে। এর মধ্যে বিক্রির উপযোগী বনসাই রয়েছে ২০০ পিস। এছাড়া আরো ৪০০ পিস বনসাই তৈরি হচ্ছে। গত এক যুগে তিনি বনসাই বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১২ লাখ টাকা।
এক সময় বাবা বনসাই নিয়ে আরিফুলের কাজ অপছন্দ করলেও বাণিজ্যিক বিক্রিতে ছেলে সাফল্য পাওয়ায় অনুপ্রাণিত করেন আইনুল নিজেও। ময়মনসিংহে বনসাইয়ের সমাহার ঘটিয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিমনষ্ক হিসেবে তৈরি করতে ভূমিকা রাখতে চান তরুণ এই বনসাই শিল্পী। বনসাই সোসাইটি গড়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে চান অনেক নার্সারী ব্যবসায়ীকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ