Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সবার সমান অধিকার কেউ অবহেলিত নয় : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বড় হৃদয়ের মানুষ : মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১০ এএম

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মাদাম নূর আশিকিন বিন্তী মো. তায়িব। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে এ মন্তব্য করেন হাইকমিশনার। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মিয়ানমার থেকে নিপীড়িত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মালেশিয়ান হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ। তিনি বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে পছন্দ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্বপালনকালে বাংলাদেশকে নিজের দেশের মতো মনে হয়েছে। বাংলাদেশের দ্রæত উন্নয়নেরও প্রশংসা করেন হাই কমিশনার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মালেশিয়াসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের কারণে তাদের ফসলি জমি, কাজ হারিয়ে ভোগান্তিতে আছে। নতুন করে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আরো রোহিঙ্গা আসছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য মালেশিয়াকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় মানবিক বিপর্যয়ের সময় চোখ বন্ধ করে থাকা যায় না। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও তাদের কষ্ট লাঘবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দু’দেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া একটি।
দায়িত্ব পালনকালে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান হাইকমিশনার। সাক্ষাতের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।
সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করব
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ নিজেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা অবহেলিত ভাবলে চলবে না। সবাইকে ভাবতে হবে এই দেশের নাগরিক এবং প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে। আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই এবং এটা নিশ্চিত করব- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতিত)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ৫০০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। চলতি অর্থবছরে আরও দুই হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
বুয়েটের ও বরগুনার সাঁওতাল আদিবাসী মিয়াট বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। এছাড়া, সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের জীবন-মান উন্নয়ন,বৃত্তি উপকারভোগীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং প্রকল্পের নানা দিক সম্বলিত কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শুধু নয়, আমাদের দলিত শ্রেণি, হিজড়া, চা শ্রমিকসহ দেশের সব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৩০ লাখ ৮৭ হাজার। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ১৫ লাখ সমতলে বসবাস করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বৈচিত্রের মাঝেই ঐক্য হচ্ছে- বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক উজ্জ্বলতম বৈশিষ্ট্য। এই যে নানা মানুষ, নানান ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস- সবকিছু মিলে যে বৈচিত্র এটা কম দেশেই পরিলক্ষিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাবলম্বিতা অর্জন, সেই সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, শিক্ষায়-দীক্ষায়, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের সব জনগোষ্ঠী যেন সমান সুযোগ-সুবিধা পায়, কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্য আমরা বিশেষভাবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যার ফলে আজ এই বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান।
বৃত্তিপ্রাপ্ত সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা স্বকীয় পোশাক পরে অনুষ্ঠানে আসায় তাদের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খুব ভালো লাগলো, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে সুন্দরভাবে এসেছে। এটা খুবই সুন্দর লেগেছে। খুবই ভালো লেগেছে। উপস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যার যার পেশা, সেই পেশাটা ছেড়ে দিলে চলবে না। সেই পেশাটাকেও ধরে রাখতে হবে এবং সেটাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই যেন আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা যায় সেদিকে তোমাদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে- সেটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের এই অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর র্কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈাতক কোরের ডিনসহ বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ