Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব বিষয়ে চাই জাতীয় ঐকমত্য: প্রেসিডেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৮:৪৭ পিএম

দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে সব বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুতে আজ সংসদে দেওয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও ব্যক্তিবর্গ এবং এ কর্মযজ্ঞে সহায়তা প্রদানের জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান প্রেসিডেন্ট। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সকল ভোটার, বিশেষত মহিলা ও নবীন ভোটারদেরকেও তিনি অভিনন্দন জানান।
প্রেসিডেন্ট বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত¡াবধানে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। জনগণের এ রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রæতিসমূহ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এই সকল প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে ঐকান্তিকভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকাÐ মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক আট-ছয় শতাংশ। বাংলাদেশ আজ জিডিপি ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্ব-অর্থনীতিতে ৩৩তম এবং জিডিপি’র আকারের ভিত্তিতে ৪১তম।
জাতীয় বাজেটের আকার এবং রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় বাজেট বর্তমান অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং এডিপি ১ লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থে আমরা পদ্মা সেতু, বিভিন্ন নদীর উপর সেতু এবং ফ্লাইওভার নির্মাণসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করছি।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে দেশের অভ্যন্তরে মোট ১ কোটি ৩৪ লক্ষের অধিক এবং বিদেশে প্রায় ৮০ লক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তন্মধ্যে বিগত ৫ বছরে ৩৪ লক্ষ ৮২ হাজার কর্মী বিদেশে গমন করায় প্রায় ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে ১৯টি শ্রম উইং খোলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জানান, বর্তমানে দেশীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ ঔষধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে এবং পৃথিবীর ১৪৫টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে বর্তমানে প্রতি হাজারে ১ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার ২৪ ও মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক সাত-দুই এবং গড় আয়ু ৭২ দশমিক আট বছর হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনের জন্য মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ