পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়কপথে যানজট বিবেচনায় এবং রেলপথে নানা সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় ট্রেন ভ্রমণে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। সে জন্য ট্রেনে যাত্রীসেবা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগও বাস্তবায়ন করছে সরকার। এতে ট্রেনের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে যাত্রীর চাপও। কিন্তু দেশের মিটারগেজ লাইনে অধিকসংখ্যক রেলকোচ চালানো যায় না বিধায় যাত্রীর চাপ সামলানো দিনে দিনে মুশকিল হয়ে পড়ছে। আর তাই গতকাল মঙ্গলবার একনেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায় সমস্ত মিটার গেজ রেলপথকে পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় একনেকের বিকল্প চেয়ারপারসন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন। সভায় ‘৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজপল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৫টি এবং সংশোধিত প্রকল্প চারটি। এছাড়া সারা দেশের আরও ১ কোটি মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ খাতে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং প্রকল্পের বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, সাধারন অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ দিলোয়ার বখতসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় একনেকের সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৬ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার মধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়া হবে প্রায় ২ হাজার ৫২৭ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা।
রেলওয়ে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রেলওয়ের দক্ষতা বাড়াতেই ব্রডগেজে যেতে হবে। আমরা বিদেশ থেকে রেলের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কিনছি, সামনে দেশেই এগুলো বানাতে হবে। রেল পার্টস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো তৈরির নির্দেশও দেন সংশ্লিষ্টদের।
সমন্বিত পরিবহন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল-নৌ ও সড়ক পথে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে হবে। যাতে চট্রগ্রাম থেকে রেলের টিকট নিয়ে ঢাকা এসে নৌ বা সড়ক পথে বরিশালে যাওয়া যায়। উন্নত দেশে এমন ব্যবস্থা চালু আছে। এক টিকিটে সকল পরিবহনে যাতায়াত করা যায়। বিটিসিএল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট গতি বাড়াতে হবে। বিটিসিএলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
এম এ মান্নান বলেন, সকল আবাসন ও শিল্প কারখায় বর্জব্যবস্থাপনা অবশ্যই রাখতে হবে। ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন ফসলী জমি, চর ইত্যাদি যেন নষ্ট না হয়। স্থাপনা নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এই বিষয়ে আইন করতে হবে। একই সঙ্গে ভূমি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, হাওরের উন্নয়নসহ সব থেকে রির্সোসফুল এলাকার উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এছাড়া একনেক সভায় বিদ্যু উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সকল কার্যক্রমের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা। এক্ষেত্রে এম এ মান্নান বলেন, আমি নিজেও নির্বাচনের সময় সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা জনগনের কাছে তুলে ধরেছি। পিডিবি এবং আরইবি নির্বাচনকালীন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যু দিয়ে সাহয্য করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এম এ মান্নান বলেন, আরও ১ কোটি মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এ জন্য ২০ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া হবে। ২০২০ সালের জুনের মধ্য এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো
২ হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ১ হাজার ৩২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ২৮৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কক্সবাজারের লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক (এন-১১০) চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প; ১০২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ৬ষ্ঠ কিলোমিটারে ১০৩ দশমিক ৪৩ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ১৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প যথাক্রমে সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট ১০০ শতাংশ সিম্পল সাইকেল (এইচএসডি-ভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প; রংপুর বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্প; রাজশাহী বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ এবং পুনর্বাসন প্রকল্প; এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ (১৯ দশমিক ৫ লাখ গ্রাহক সংযোগের সংস্থানসহ -১ম সংশোধিত) প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী ও একনেক এর বিকল্প চেয়ারম্যান আ হ ম মুস্তফা কামাল; পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক; তথ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিল্প নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক; বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্শি; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।