Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যানজট আর মানুষের ভিড়ে একাকার মেলা প্রাঙ্গণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আগের দিনের মতো গতকাল শনিবারও যানজটের কারণে অনেক দর্শণার্থীকে হেঁটে মেলায় যেতে দেখা যায়। যানজট আর মানুষের উপচেপড়া ভীড়ে সমগ্র শেরে বাংলানগর এলাকা একাকার হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সব ধরনের মানুষের স্রোত বইতে দেখা গেছে। কোনো মতে মানব স্রোত সামলে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে আবার লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকতে অনেককে কষ্ট করতে দেখা যায়। এদিকে মেলার বাইরে ভিডের মধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে বাড়তি দামে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে।

ভিড় এড়িয়ে সহজে মেলায় প্রবেশের কথা বলে টিকেট বিক্রি করেন একটি চক্র। ‘ভিআইপি’ লেখা এসব টিকেট বিক্রি করা হয় টিকেটের মূল্যের চেয়ে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকায়। অনেকেই টিকেটের লাইনে না দাঁড়িয়ে তাদের কাছ থেকেই কিনে মেলা প্রবেশ করেন।

এদিকে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ১৮তম দিন পার করেছে। ইতোমধ্যে ১৫ লাখে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছেন। সবমিলে মেলার প্রথম দিকের ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরা কাটিয়ে এখন জমজমাট মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার গেট ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের বর্ণনামতে প্রথম ১৭ দিনেই ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে মেলার দর্শনার্থীর সংখ্যা। মেলার গেটে দায়িত্ব পালন করা এক কর্মী বলেন, এবার মেলায় দর্শনার্থীর হার বেশ ভালো। গত শুক্রবার আমাদের ধারনা অনুযায়ী প্রায় দুই লাখ দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছে। তার আগের শুক্রবারে দর্শনার্থীর সংখ্যা দেড় লাখ এবং শনিবার এক লাখ ছিল বলে আমাদের ধারণা। আর অন্যান্য দিনে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছে।

এদিকে গেট ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের কর্ণধার মীর শহিদুল অফিসিয়াল ভাবে জানান, এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সব থেকে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এদিন টিকিট বিক্রি হয় এক লাখ ৪০ হাজারের মতো। তিনি জানান, গতবারের তুলনায় এবার দর্শনার্থী কিছুটা কম। গত বছর এমন সময় এক শুক্রবারের এক লাখ ৬০ হাজারের ওপরে টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে এবার মেলায় যে হারে দর্শনার্থী আসছে আমরা তাতে সন্তুষ্ট। সামনের দিনের দর্শনার্থী আরও বাড়বে আমরা আশা করছি। মেলার প্রথম ১৭ দিনের টিকিট বিক্রির বর্ণনা দিতে গিয়ে মীর শহিদুল বলেন, প্রথম শুক্রবার দর্শনার্থী তুলনামূলক কম ছিল। ইতোমধ্যে মেলা শুরু হওয়ার পর তিনটি শুক্রবার চলে গেছে। শুক্রবারে গড়ে এক লাখ ৩০ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। বাকি দিনে গড়ে ৩০ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। গতকালের দর্শনার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, শুক্রবারের তুলনায় শনিবার দর্শনার্থী তুলনামূলক কম থাকে। আর গত শনিবার আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। যে কারণে ওই দিন মেলার দর্শনার্থীর সংখ্যাও কম ছিল। তবে আজ (শনিবার) সকাল থেকেই ভালো দর্শনার্থী আসছে। ধারণা করছি আজও বেশ ভালো দর্শনার্থী হবে। তিনি বলেন, মাসব্যাপী এ মেলায় শুধু রাজধানীবাসী নয়। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও লোকজন আসে। এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। ফলে মেলায় অংশ নেওয়া স্টলগুলোতেও বিক্রি ভালো হচ্ছে।

সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শনিবার ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছেন অনেকেই। মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টলে গিয়ে কেউ বিভিন্ন জিনিস কেনেন, কেউ আবার দেখেন, কেউবা বন্ধুদের সাথে সেলফি তোলায় ব্যস্ত সময় পার করেন। এদিন বিক্রি বেশি হওয়ার কথা জানান অনেক বিক্রেতা। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী মিষ্টি আহমেদ খান বলেন, আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে তাদের। তিনি বলেন, আসলে ছুটির দিন তো অনেক কাস্টমার আসে। শুক্র-শনিবার বেশি বিক্রি হয়, আমরাও এ দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। ভালো বিক্রি হয়েছে। থ্রি-পিস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। ফলে বিক্রিও হয়েছে কম। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশ বেড়েছে। এতে বেড়েছে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্রির পরিমাণ। থ্রি-পিস বিক্রির পরিস্থিতি অনেকটা মেলার প্রথম দিকের মতই রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মেলায় মাত্র ৫৯৯ টাকায় তিন সেট থ্রি-পিস বিক্রি করছে একাধিক পোশাকের প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ৯৯৯ টাকার প্যাকেজেও দেওয়া হচ্ছে তিন সেট থ্রি-পিস। আছে এক হাজার টাকায় দুই সেট থ্রি-পিস কেনার অফারও। দেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশিদের নামে নেওয়া প্যাভিলিয়নেও এ অফার দেওয়া হচ্ছে। মো. কামাল নামে স্টলের এক বিক্রয় কর্মী বলেন, আমরা গোল্ডেন অফারের আওতায় ক্রেতাদের ৫৯৯ টাকায় তিন সেট থ্রি-পিস দিচ্ছি। এটা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এক ধরনের ব্যবসায়িক কৌশল। অফারের বাইরে আমরা আলাদা আলাদাভাবে থ্রি-পিস বিক্রি করছি। তিনি বলেন, এবার বিক্রি পরিস্থিতি মোটেই ভালো না। ভালো মানের বিদেশি পণ্যের এমন অফার দেওয়ার পরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না এটা দুঃখজনক। দেখা যাক শেষ মুহূর্তে বিক্রি পরিস্থিতি পরিবর্তন হয় কি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ