পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলার ঘোষণা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশকে এ দু’টি অপরাধ থেকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছি। তিনি বলেন, আমরা অন্যায়, দুর্নীতি করবো না। ঘুষ দিবো না। আমাদের নবীজি (স.) ঘুষ-দুর্নীতি পছন্দ করতেন না। আমাদের সবার উচিত প্রিয় নবীর (স.) পথ অনুসরণ করা। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটিই অপরাধ। ঘুষ দিলে জাহান্নামে যেতে হবে। তাই সবাইকে অঙ্গীকার করতে হবে কেউ ঘুষ দেবো না। কোনো কাজ দু’দিন দেরি হলেও আমরা ঘুষ দেবো না। প্রধানমন্ত্রী ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলছি, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলবো।
শনিবার (২৬ জানুয়ারি) মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ‘সংবর্ধনা ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে’ অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি এবং দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দেয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বি এইচ হারুন এমপিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। দেশের প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ, বরেণ্য আলেম, ওলি-আউলিয়া, ইসলামী প-িতদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসবিচ অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মনে করেন মন্তব্য করে মুস্তফা কামাল বলেন, তিনি জমিয়াতের একজন অংশীদারও। প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজে যেই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার মনে করেন সেই প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ করতে অসুবিধা হবে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, আমরা এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকার জন্য আসিনি। এসেছি ক্ষণিকের জন্য। আল্লাহর সাথে একটি চুক্তি করে এসেছি। এই চুক্তিটি হলো- আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, তাকে খুশি করার জন্য তার যাবতীয় সাংবিধানিক চাহিদা আছে সেগুলো আমরা পূরণ করবো। সাংবিধানিক চাহিদা হলো- আমাদের পবিত্র কোরআন এবং প্রিয় নবীর (স.) রেখে যাওয়া সুন্নত। আমরা সে অনুযায়ী আমাদের জীবনকে পরিচালিত করবো।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আজ থেকে ৪শ’/৫শ বছর আগে যাকে বলা হতো মধ্য যুগের দেশ। সেই সময়ে সারা বিশ্বে সমাদৃত ছিল ইসলাম। সে সময় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইসলামের ছিল জয় জয় কার। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা মুসলমান, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারি নাই। আমাদের মধ্যে অনেক বিরোধ-বিভাজন। আর এ সব কারণে আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে যেতে পারিনি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ চূড়া থেকে আমরা বিচ্যূত হয়েছি।
সকলের মাঝে দেশপ্রেম থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাটি মানুষ ও খাটি মুসলমান হতে হলে অবশ্যই দেশপ্রেম থাকতে হবে। যার দেশপ্রেম নেই; সে কখনো খাঁটি মুসলমান হতে পারে না। আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেক ভালো কাজ করেন। ভালো কাজ করেন বলেই দেশের অর্থনীতি আজ অনেক সমৃদ্ধ। সারাবিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ে গর্বিত। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পিছিয়ে পরা দেশগুলো আজ সামনে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে অনুসরণ করে। দেশের এই অবদান সকলের। আপনাদেরকে বাদ দিয়ে দেশ এই অবস্থানে আসতে পারতো না।
সামর্থবানদের যাকাত প্রদানের তাগিদ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যখন রমজান মাস আসে মসজিদে জুমআ এবং অন্যান্য নামাজের সময় ফিৎরা আদায়ের তাগিদ দেয়া হয়। আমার অনুরোধ থাকবে এখন থেকে ফিৎরা আদায়ের পাশাপাশি আমাদের মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য যাকাত দেয়া। উপযুক্তদের সবাইকে যাকাত দিতে হবে। তাই এক্ষেত্রে আপনারা আলেম-ওলামারা সবাইকে অনুরোধ করবেন। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনে ৩২ বার আল্লাহ যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ইনকাম ট্যাক্সের জন্য নয়; ইনকাম ট্যাক্সের আওতার বাইরে। আমাদের সমাজে কিছু দরিদ্র মানুষ আছে। তাদেরকে যাকাতের মাধ্যমে সাহায্য করতে হবে। যাকাত গরিবের হক। যাকাত দিলে কারও সম্পত্তি কমে না। সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন হবে, সম্পদ পবিত্র হয়, বৃদ্ধি হয়। সমাজে ভারসাম্য বজায় রাখতে আমরা সবাইকে যাকাত দিতে উদ্বুদ্ধ করবো। তাহলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর হবে।
শুধু নিজের কথা নয়, পিতা-মাতার কথাও চিন্তা করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই আমাদের পিতা-মাতার প্রতি তাদের হক আদায় করবো। পিতা-মাতার হক আদায় করতে হবে। এটা করতে পারলে সারা পৃথিবী বেহেশতে পরিণত হবে। মারামারি-হানাহানি চাই না। একই সঙ্গে আমরা একজনের অনুপস্থিতিতে কথা বলি, গীবত করি। গীবত বড় অন্যায় কাজ। এটা না করে মানুষকে নামাজে অকৃষ্ট করবেন। নিজরা শুধু নামাজ পড়বেন অন্যরা নয় এটা হবে না। নিজের ছেলে-মেয়েকে নামাজে আকৃষ্ট করবেন। অন্যদেরও নামাজের আহ্বান জানাতে হবে।
মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জমিয়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা আছে। এ সংগঠনের নেতৃত্বেই মাদরাসা শিক্ষার বৈষম্য দূর হয়েছে। ইসলামী-আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সমান মাদরাসা শিক্ষকরা সমান সুযোগ ও মর্যাদা পাচ্ছেন। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা আলেমের পাশাপাশি চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সবই হয়েছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বর্তমান সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দিনের সুযোগ্য নেতৃত্বে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মুস্তফা কামাল বলেন, আপনারা অনেক আলোকিত মানুষ, জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানী ও শিক্ষিত ভয়ের কোন কারণ নেই। ভয় করবেন শুধু আল্লাহকে। একই সঙ্গে নিজে যেটা ভালো মনে করবেন সেটা নিজে করার পাশাপাশি দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ আগের আওয়ামী লীগ এক নয়; আজকের বাংলাদেশ এবং আগের বাংলাদেশ এক নয়। সুতরাং এই যে পরিবর্তন, এই পরিস্থিতিতে আসুন আমরা সবাই একে অপরের কাধে কাধ মিলিয়ে আমরা এই দেশের উন্নয়নে কাজ করি। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং যে দিকটায় আমরা পিছিয়ে আছি সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।