পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ হলেও আতঙ্ক কাটেনি। হাজার হাজার শ্রমিক এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। অজ্ঞাত মামলার ভয়, কারখানার গেট থেকে ছবি দেখে বিদায় করে দেয়া ও স্থানীয় মাস্তানদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়াসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। মামলার ভয়, ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেয়া এবং চাকরি না থাকায় পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ত্রিমুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে পোশাক শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।
পোশাক শ্রমিক সংগঠন ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনার দাবিতে আন্দোলন করার পর পোশাক কারখানার প্রায় চার হাজার শ্রমিকরা এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। অজ্ঞাত মামলার ভয়, কারখানার গেট থেকে ছবি দেখে বিদায় করে দেয়া এবং হঠাৎ করে কারখানা বন্ধের ঘোষণায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। গত ডিসেম্বর থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কেবল একটি সংগঠনের হিসাব বলছে- শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সংখ্যা প্রায় চার হাজার, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন, জামিন পেয়েছেন মাত্র একজন।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বেশ কিছু কারখানায় ছবি দেখে দেখে তাদেরকে কাজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। যেসব কারখানায় কোনো ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি, সেসব জায়গাতেও শ্রমিকদের জোর করে কাজ থেকে বিদায় করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকেরা। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক আন্দোলনের পর অনেক বাড়ির মালিক বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। অনেক শ্রমিক এরই মধ্যে ভাড়া বাসা হারিয়েছেন। একই সাথে স্থানীয় মাস্তানদের দ্বারা অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে শ্রমিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, এটি ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না। রোজই আমাদের কাছে এমন ছাঁটাইয়ের সংবাদ আসছে, শ্রমিকরা আসছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো- অজ্ঞাত মামলা হওয়ায় অনেক শ্রমিক এলাকা ছাড়া। অনেকেই কারখানায় যোগ দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ন্যায্য অধিকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার কারণে ছবি ধরে খুঁজে খুঁজে চাকরি হারাতে হলে এই শ্রমিক তার দাবি কোথায় জানাবে?
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কোনো পোশাক শ্রমিক যদি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাহলে ওই শ্রমিককে ছাঁটাই করার অধিকার মালিকপক্ষের রয়েছে। তবে জোর করে বের করে দেয়া, পাওনা না দেয়া বা অন্যায়ভাবে কেউ নির্যাতন করলে শ্রমিকরা অবশ্যই সাহায্য পাবেন। এ ছাড়া কোনো বাড়ির মালিক অন্যায়ভাবে কোনো শ্রমিককে বের করে দিলে কিংবা স্থানীয় কোনো ব্যক্তির দ্বারা কোনো শ্রমিক হয়রানির শিকার হলে পুলিশ অবশ্যই আইনগত সাহায্য করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
থানা পুলিশ নির্যাতনে শিকার শ্রমিকদের সাহায্য করছেন না এবং অজ্ঞাত মামলার ভয়ে রয়েছেন অনেক শ্রমিক এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নির্যাতনে শিকার কেউ থানা-পুলিশের কাছে পাওয়ার পর আইনগত সহযোগিতা না করার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর মামলা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে চার হাজারের মতো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে তিন হাজারই হয়েছে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে করা আন্দোলনের পর। তাদের তথ্য মতে, ছাঁটাইয়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে। এমনকি অজ্ঞাতনামা করে মামলা করায় অনেক শ্রমিক এলাকাতেও থাকতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তারা। নিশ্চিন্তপুর, বাইপাইল, সাভার বাজার, জিরানি বাজার, আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ড, গাজীপুর, কোনাবাড়ি, জামগড়া এলাকায় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক সংখ্যা তিন হাজার ৫০ জন।
বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ কোনো শ্রমিক সংগঠন আমাদের জানায়নি। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই। যদি এমন ঘটেই থাকে শ্রমিক সংগঠনগুলো কেন জানাবে না। এ ছাড়া পুলিশ সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভিন্ন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করার তালিকা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের দেয়া হলে আমরা আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তা ছাড়া নিরীহ কোনো শ্রমিককে যদি কোনো বাড়ির মালিক বের করে দেয়, তা-ও তদন্ত করে দেখব আমরা।’
ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক সাকিব হোসেন বলেন, এখনো রোজই আমরা ছাঁটাইয়ের খবর পাচ্ছি। আজকেও ছয়জন ছাঁটাই হয়েছে, গত রোববার ১১ জনকে বের করে দিয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ২৪০ জনকে বের করে দিয়েছে। বেতন বাড়ানোর যে ধর্মঘট হয়েছিল, সেখানে আমরা ভাঙচুর করিনি। কিন্তু এখন অফিসে ছবি দিয়েছে শ্রমিকদের, সেগুলো দেখে দেখে বের করে দিচ্ছে। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ভেতরে নিয়েছে কিছু শ্রমিককে। আমাকেও ভেতরে নিয়েছিল, তারপর জোর করে আইডি রেখে বের করে দিয়েছে। মামলার ভয়ে আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না।
কেন এলাকায় থাকা যাচ্ছে না, প্রশ্নে তিনি বলেন, আন্দোলন করার জন্য পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বাসায় না পেলে পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমাদের এখানে মামলায় ৬২ জনের নাম আছে বলে শুনেছি, কেউ বাসায় ঘুমাতে পারছে না। কারখানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও টেলিফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া এলাকার ছাঁটাই হওয়া আরেক শ্রমিক মো. আবু রায়হান বলেন, আমরা কোনো উচ্ছৃঙ্খলা করিনি, মালিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি। অফিসের ভেতরে যারা নেতা, তাদের পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। নিলুফার আখতার নিলুফা, ফারুকসহ আরো কয়েকজন, তারা নেই। তিনি আরো বলেন, ৩৩০ জন শ্রমিকের ছবি ফটোকপি করে গেটে টাঙায়ে দিছে। আমরা আর কোথায় চাকরি পাবো? কোনাবাড়ির রেজাউল অ্যাপারেলসের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক ইসমাইল বলেন, ‘ফ্যাক্টরিতে তালা লাগিয়েছে সপ্তাহখানেক হয়ে গেল। গেজেট হলে আমরা দেখি কোনো সিনিয়র জুনিয়র নাই। শ্রমিকরা এই বেতন মানে নাই, তাতে করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, মালিক এখন কোনো কথা বলে না। কারখানা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ লিখে দিয়েছে শুধু।’
গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লীমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্দোষ শ্রমিকের কিছু যেন না হয়, সে শর্ত জুড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন নির্দোষ অনেকের হয়রানি করার অভিযোগ পাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এমনকি মালিকের লোক বাসায় বাসায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগও আমাদের কাছে এসেছে।’ এখন আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তালিকা করছি, সংবাদ সম্মেলন করব।
আশুলিয়া থানার ওসি রেজাউল হক বলেন, এই ঘটনায় মোট সাতটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত হিসেবে মামলা থাকায় শ্রমিকরা এলাকায় থাকতে পারছে না দাবি করেছেন জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো কল্পনাপ্রসূত কথা। ওরা চাকরিচ্যুত টাউট। ওরা সবাই পলাতক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।