Inqilab Logo

সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমিক বিক্ষোভে ভোগান্তি

উত্তরায় পোশাক শ্রমিকদের অবরোধে তীব্র যানজট আশ্বাসে ৫ ঘণ্টা পর বিমানবন্দর সড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ন্যুনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৫ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ভোগান্তি থেকে বাদ পড়েননি বিমানের যাত্রীরাও। এ সময় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরের সামনে গোল চত্বর, উত্তরার জসিম উদ্দিন, রাজলক্ষী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং, আবদুল্লাহপুরসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ অবরোধ করে রাখে পোশাক শ্রমিকরা। বিক্ষোভ থেকে উঠে যাওয়ার আগে তারা সোমবার (আজ) সকালে আবারও বিক্ষোভে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে শত শত বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়ে প্রায় সব সড়কে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। অবরোধের সময় গাজীপুরগামী কিছু বাস কুড়িল বিশ্বরোড ও রেডিসন মোড় থেকে ঘুরে যেতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী মো. হামিদ ও নূর মোহাম্মদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শত শত শ্রমিক সকাল ৯টার দিকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের খবর পেয়ে রাজধানীর উত্তর খান ও দক্ষিণ খান এলাকা থেকেও শ্রমিকরা এসে সড়কে অবস্থান নিতে শুরু করে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট।
বিমানবন্দর সড়কের উভয়দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেককে কুড়িল থেকে ব্যাগ হাতে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। এমনকি ফায়ার-সার্ভিস ও পুলিশসহ কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হয়নি অবরোধের সময়। দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভের সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে কথা বলেও কোন প্রতিকার করতে পারেননি। পরে পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বিভিন্ন আশ্বাস দিলে রোববারের মতো অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা (শ্রমিক)।
বিমানবন্দর পুলিশের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শত শত শ্রমিক সকাল ৯টার দিকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি অংশ বেলা ১১টার দিকে বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বরে সামনে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি জসিম উদ্দিন, রাজলক্ষী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর এলাকায় তাদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। পরে পোশাক কারখানার মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকরা উঠে যাওয়ার পর বেলা ২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পোশাক শ্রমিকদের জন্য সরকার নতুন বেতন কাঠামো করলেও মালিকপক্ষ তা দিচ্ছে না। মালিকপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে অবরোধ তুলে নিলেও আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা। ভার্সেটাইল অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান একে ফজলুল হক গতকাল বেলা দেড়টার দিকে আজমপুর চৌরাস্তায় গিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যে নতুন মজুরি কাঠামো করেছে আমরা সে অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেবো। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। আমাদের গার্মেন্টসের মজুরি কাঠামোতে যদি কোনও ভুলত্রুটি থাকে তবে আপনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সরকারি মজুরি কাঠামোর বাইরে আমরা কিছু করবো না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলন করবে সেটা আমাদের জানায়নি। তবে আমরা তাদের বলেছি গত ১ ডিসেম্বর যে মজুরি কাঠামো সরকার গঠন করেছে সে অনুযায়ী আমরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেবো। তাদের যদি কোনও অসন্তোষ থাকে তবে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করে নিতে পারে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্যে শামীম আহমেদ নামে একজন জানান, সকালে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি বিক্ষোভে এসেছেন। আগে আমি জানতাম না আন্দোলনের বিষয়ে। আমার অফিসে খবর দিছে অন্যরা। সেই খবর শুইনা এইখানে আসছি। আমাদের দাবি আমাদের বেসিক সাড়ে আট হাজার টাকা থাইকা বাড়াইয়া সাড়ে দশ হাজার টাকা করুক। দক্ষিণ খানের চালাবন এলাকার ইপিলিয়ন গার্মেন্টের কর্মী সুমাইয়া অভিযোগ করেন, তাদের ওপর নানা ধরনের ‘অন্যায়’ করা হয়, এজন্য তারা পথে নেমেছেন। আমাদের বেতন যা বাড়ানোর কথা ছিল তা তো বাড়ায়নি। উল্টো কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রতি ঘণ্টায় টার্গেট দিয়া দেয়। টার্গেট ফিলাপ না করতে পারলে গালিগালাজ করে। ক্যাসিওপিয়া গার্মেন্টেসের কর্মী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান বলেন, কাজের চাপে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারি না। টার্গেট পূরণ না করতে পারলে বকাঝকা, মারধরও করে।
হাউজবিল্ডিং কাউণ্টার থেকে বেলা সাড়ে ৯টায় রওনা হয়ে রাস্তায় আটকা পড়ে মাওয়াগামী প্রচেষ্টা পরিবহনের একটি বাস। বাস চালকের সহকারী দুলাল জানান, তারা উত্তরার বিভিন্ন গলি দিয়ে বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসতে পারলেও এগোতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, ‘এইহানে আওয়ার পর আর যাইতে পারি না। আটকাইয়া দিছে। কাছের যাত্রীরা নাইমা গেছে। যারা দূরে যাবে তারা বইসা আছে। যাইতে পারুম কি না বুঝবার পারতেছি না’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পোশাক শ্রমিক

৩০ জানুয়ারি, ২০২২
৮ মার্চ, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ