ডিপিএইচই’র পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প সুবিধা পাবে ৩০ পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দা
দেশের ৩০টি পৌরসভার প্রায় ৬ লাখ সুপেয় পানির সংযোগ দেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পাশাপাশি
‘আমার ভোট আমি দেব, দেখে-শুনে বুঝে দেব’। এই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন ভোটাররা। চারিদিকে চোখে পড়ছে ভোটার-জনতার জাগরণ। যা এক কথায় অভূতপূর্ব। সাথে চাপা ভয়-সংশয় তো আছেই। তবে ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে। ভয়কে জয় করেই ভোটকেন্দ্রে যেতে উদগ্রীব ভোটাররা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী সপ্তাহের রোববার ভোটগ্রহণের সেই বহুকাক্সিক্ষত ক্ষণের আর বাকি মাঝখানে মাত্র দুই দিন।
বাংলাদেশের উত্থান-পতনের ইতিহাস, রাজনীতি আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ‘বীর চট্টগ্রাম’। এ অঞ্চলের সর্বস্তরের ভোটারের মাঝে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আগ্রহ প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠেছে। এখানে-সেখানে সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় তা ফুটে উঠছে। সেই সঙ্গে ভোটারদের প্রত্যাশা নিরাপদে যার যার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে আবার নিরাপদে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে আসা। এরজন্য তারা চান বাধা-বিপত্তিহীন আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ।
গত ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচনী মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর চাটগাঁর শান্তিপ্রিয় জনগণের মাঝে ভয়ভীতির পরিবেশ কেটে গিয়ে অনেকাংশে স্বস্তি ফিরেছে। তৈরি হতে চলেছে আস্থাশীল পরিবেশ। ভোটাররা মাঠের পরিস্থিতি গভীর ও সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। আরও নিশ্চিন্ত থাকতে চান তারা। কেননা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা ও চেতনার প্রতীক।
এদিকে বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ জেলা চট্টগ্রামের ১৬টি আসন এবং তিন পার্বত্য জেলার তিনটি আসন মিলিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনে ভোটারদের ভোটকেন্দ্র-অভিমুখী করতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নৌকা, লাঙল এবং বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষ, ছাতার প্রার্থী, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এরফলে উভয় জোটের মাঝে প্রতিযোগিতা চলছে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী হতে আগ্রহী করে তোলা এবং তাদের জোরালো সমর্থন লাভের টার্গেট রেখে। চট্টগ্রামের সাধারণ ভোটাররা এটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন।
বন্দরনগরী, জেলা চট্টগ্রাম ও পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকায় গত ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে হামলা-মামলা, পুলিশি হয়রানি, ধরপাকড় এবং প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগে বাধা-বিপত্তি, হুমকি-ধমকি এমনকি ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আহত, রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে একতরফা আক্রান্ত বা ঘটনার শিকার বিএনপি জোট। তাদের প্রচারণা, গণসংযোগ ছিল নিয়ন্ত্রিত ও ভীতিকর পরিবেশে। সভা-মিছিল, মাইকিং চোখে পড়ে খুবই সীমিত পরিসরে। অনেক জায়গায় তাও চোখে পড়েনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জোটের বলতে গেলে একদলীয় প্রচার-প্রচারণাসহ যাবতীয় নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ চলেছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারদের কথাবার্তা থেকে ফুটে ওঠে, প্রচারণা-গণসংযোগের মাঠে কার জোর কতটা কম কিংবা বেশি সেটি বড় বিবেচ্য নয়। ভোটের মাঠে দল-জোটের পরিচয়, অতীত-বর্তমান কর্মকান্ড অর্থাৎ মার্কা বিবেচনা করেই ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা চোখ-কান সতর্ক রেখেছেন। কিন্তু কাকে ভোট দেবেন তা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না।
বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ী মিনহাজ হোসেন সোহেল ও মুরাদপুর এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা লোকমান আহমেদ বললেন, এবারের নির্বাচনকে অতীতের নির্বাচনের সাথে মিলিয়ে দেখা যাবে না। দুই জোটের প্রার্থী ও নেতাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। আবার ভোটারদের জন্যও কঠিন পরীক্ষা। দামপাড়া ওয়াসা মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সালমান আশফাক বললেন, জীবনের প্রথম ভোটটি দেব চিন্তা-ভাবনা করে। মেহেদীবাগের দোকানি মো. জয়নাল বলেন, এবার ভোটের দিন অনেক ভোটার এক পার্টির মার্কার ব্যাজ ঝুলিয়ে ভোট দেবে হয়তো অন্যকোনো পছন্দের মার্কায়।
অনেকেই বলছেন, সাধারণ ভোটাররা গত ১২ বছরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনযাত্রার অবস্থাসহ সবকিছুর হিসাব-নিকাশ চোখের সামনে মেলে ধরে পছন্দের প্রার্থী তথা মার্কাকে ভোট দেবেন। তবে সবারই উচ্চারিত প্রত্যাশার কথাটি হলো, ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগটি নিশ্চিত থাকা চাই। অন্যথায় একতরফা কোনো দল বা জোট যদি সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভোটকেন্দ্র দখল, কারচুপি-জালিয়াতি, সন্ত্রাস চালায় তাহলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ও ভরসা আর অবশিষ্ট থাকবে না। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা হবে নস্যাৎ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা যদি ভেঙে পড়ে এরজন্য খেসারত দিতে হবে দেশ ও জাতিকে। শান্তিপ্রিয় জনগণের তা কাম্য নয়।
চাটগাঁবাসীর ভোটের ভাবনা ও আলোচনা-পর্যালোচনায় মোদ্দা যে কথাটি ফুটে ওঠে তা হলো, সব দলের ভোটযুদ্ধে অংশ নেয়ার ফলে এক যুগ পর এবারের নির্বাচনটি ‘অংশগ্রহণমূলক’। সেই সাথে ‘অংশগ্রহণমূলক’ এই নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং ব্যালটের রায়ের সঠিক প্রতিফলন দেখার আকুল প্রতীক্ষায় দেশের ভোটার-জনতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।