Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাকে তেল দিয়ে ঘুমের দিন নেই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আসছে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের আর বাকি ষোল দিন। শহর-নগর-বন্দর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-জনপদ ভোটের ক্যানভাসে সরগরম হয়ে উঠেছে। এদেশে ক্ষমতার উত্থান-পতনের ইতিহাস, রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ‘বীর চট্টলা’ তথা চট্টগ্রাম।

রাজনৈতিক দল জোট-মহাজোটের প্রার্থীদের সঙ্গে উৎসুক জনগণও মেতেছেন ভোটের উৎসবে। আকাশে-বাতাসে ভোটের কথামালা ভাসছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার রাজনীতি সচেতন চাটগাঁবাসীর কথাবার্তা আলাপ-আড্ডা থেকে যে বিষয়টি পরিস্কার উঠে আসছে তা হলো, এবারের নির্বাচন মামুলি কোনো ভোট-ভাট নয়। এটি হবে কঠিন থেকে কঠিনতম এক অগ্নিপরীক্ষার নির্বাচন।

এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের যা যা ভাবনা সেগুলোর সঙ্গে নিকট অতীতের কোনো নির্বাচনের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবার কথা হলো খুব সহজে এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের ‘নৌকা’ অথবা বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থীদের নাকে তেল দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া সম্ভব হবেনা।

সাধারণ মানুষ গত ৫ বছর, ১২ বছরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবনযাত্রার অবস্থাসহ সবকিছুর খতিয়ান সামনে মেলে ধরছেন। সবকিছুই বিচার-বিশ্লেষণ করে ভোটাররা এবার খুব সতর্ক ও সচেতনভাবে রায় দেবেন। ব্যালটের রায় কি হবে তা কেউই বলতে পারেনা। কেননা ভোটার তথা জনগণ চোখ মেলে তাকিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে কেউই কোনো মতামত প্রকাশ করছেন না। খুলছেন না মুখ। নীরবেই ঘটবে ব্যালট বিপ্লব। ভোটাররা শুধুই চান অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ।

চট্টগ্রামবাসী বিভিন্নস্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগের এই কিছুদিন এবং ভোটের দিনটি (৩০ তারিখ) খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবার সজাগ দৃষ্টিপাত। কেমন হবে নির্বাচন? নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তার নিরপেক্ষতার শতভাগ প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় অতীতের কোনো কোনো ইসি বা সিইসির মতো জনগণের ঘৃণার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।

সে সঙ্গে ইসি এবং রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সফল হলেই জনগণের অপরিসীম শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালোবাসায় স্মরণীয় থাকবেন চিরকাল। একদিনের ভোট। দীর্ঘ ৫ বছর ১০ বছরের প্রতীক্ষা। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য, অর্থবহ নির্বাচনের জন্য কোটি কোটি ভোটারের আন্তরিক প্রত্যাশা পূরণ হবে কী? এই প্রশ্ন আর কৌতূহল এখন সর্বত্র প্রবল।
আলাপকালে অনেকেরই মুখে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে, এবার কোনো একক দল বা জোট-মহাজোটের পক্ষে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভোটকেন্দ্র দখল, কারচুপি-জালিয়াতি ও সন্ত্রাস চালানো সম্ভব হবে না। কেননা কোটি চোখ ফাঁকি দেয়া যাবে না। তবে এমনটি যদি ঘটে তাহলে দেশে সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা, শান্তির পায়রা মুখ থুবড়ে পড়বে। জনগণের আকুল প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা হবে নস্যাৎ। যা সমগ্র দেশের মতো চট্টগ্রামবাসীরাও আশা করেন না। তবে এসব বিষয় মাথায় রাখছেন সাধারণ মানুষ। এরফলে চলমান ভোট উৎসবের পাশাপাশি জনসাধারণের মনের কোণে আছে এক ধরনের চাপা শঙ্কা-উৎকণ্ঠার কালোমেঘ।

কেননা বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি-সামর্থ্য সচল থাকবে তখনই যখন দেশে শান্তির বাতায়ন থাকে উন্মুক্ত। যদি তা রুদ্ধ হয় তাহলে দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় অনিবার্য। দেশের আমদানি-রফতানি প্রবাহের শতকরা ৮৫ ভাগ এবং জাতীয় রাজস্বের একক বৃহৎ অংশই জোগান দেয় চট্টগ্রাম।

অবশ্য একথা অনেকেই বলছেন, জনগণের মাঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রশ্নে সচেতনতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি এবার সমগ্র বিশ্বের সজাগ দৃষ্টিপাতের কারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনার পাল্লা ভারী।

প্রার্থীর চেহারা দেখে নয়, দুই জোটের মার্কার ভোট
চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সবাই এখন সতর্ক। চোখ-কান খোলা। তবে ‘বোবা’। অর্থাৎ সরাসরি মুখ খুলে মনের মাঝে সঞ্চিত রাখা সমর্থনের কথা ব্যক্ত করতে নারাজ। তারা বলছেন, এবার কিন্তু প্রার্থীর চেহারা দেখে ভোটাররা ভোট দেবেন না। প্রথমত দেখবেন মার্কা তথা দল ও জোটের পরিচয়। দ্বিতীয়ত বিচার-বিশ্লেষণ করবেন প্রার্থী ও তার দলের অতীত কর্মকান্ড। প্রার্থীর নিজের চরিত্র।

গত দশ বছরে নির্বাচনী ওয়াদা-আশ্বাস পূরণের ফর্দ যাচাই করছেন ভোটাররা। সেই সাথে প্রার্থীদের মাঝে কারা আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো নিজের ভাগ্য বদল করেছেন তাও জনতার আদালতে হিসাব-নিকাশ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দেশের ৯০ ভাগ জনগণের মাঝে লালিত-পালিত, অনুসৃত ইসলামী আদর্শ, বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার বিকাশ এবং উন্নয়ন, আলেম-ওলামাদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কোন দল অতীতে কি ভূমিকা পালন করেছে তারও খতিয়ান নিয়ে চুলচেরা হিসাব-নিকাশে বসেছেন বারো আউলিয়ার পুন্যভূমি চট্টগ্রামের মানুষজন।
গত ১০ ডিসেম্বর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়। এরপরই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। কারো হাতে নৌকা কারো হাতে ধানের শীষ। কিংবা ‘লাঙল’, ‘ছাতা’ এবং অন্যান্য প্রতীক। বন্দরনগরীর তিনটি আসনসহ চট্টগ্রামের ১৬টি আসন এবং তিনটি পার্বত্য জেলার তিন আসন মিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন নৌকা এবং ধানের শীষের প্রার্থীরা। সঙ্গে আছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থকগণ। হাতে আছে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার। মুখে উঠেছে মার্কার আওয়াজ- “৩০ তারিখ শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন”। “৩০ তারিখ শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন”।
চাটগাঁর রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষের আকুল প্রত্যাশা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলুক দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক পক্ষ আওয়ামী লীগের মহাজোট আর বিএনপির ঐক্যফ্রন্টের ভোটের প্রচার-প্রচারণার যুদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হোক সুনিশ্চিত। যাতে ভোটাররা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আবার নিরাপদে ঘরে-বাড়িতে ফিরে আসতে পারেন। জনগণের ব্যালটের রায়ের সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত থাকুক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ