ডিপিএইচই’র পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প সুবিধা পাবে ৩০ পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দা
দেশের ৩০টি পৌরসভার প্রায় ৬ লাখ সুপেয় পানির সংযোগ দেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। পাশাপাশি
সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে প্রার্থী ও প্রতীক চ‚ড়ান্ত করার পর দক্ষিণাঞ্চলে ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মাঝে যথেষ্ট সংশয় কাজ করছে। তবে রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ এখনো কিছুটা নিচেই রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। গোটা পরিবেশ অনুক‚ল ও অবাধ নির্বাচনের সহায়ক থাকুক এ প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রতীক বরাদ্দের পরে ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন দ’শক্তিশালী জোটের কর্মীবাহিনী। প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটাতে শুরু করেছে নির্বাচনী এলাকায়। বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অফসেট প্রেসগুলো ইতোমধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। দুই জোটের প্রার্থীদের পোস্টার ছাপার কাজ শুরু হয় সোমবার সকাল থেকেই। ঐদিন রাতেই তা ঝোলানোও শুরু হয়েছে। তবে এবার দক্ষিণাঞ্চলে মনোনয়নের কারণে বেশ কয়েকটি আসনে ভোটের আগেই বিপর্যয় বরন করে আছে ঐক্যফ্রন্টের মূল শরিক দলটি। এজন্য তাদের খেসারত কতদূর পর্যন্ত পৌঁছবে তা সময়ই বলতে পারবে। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর দুই জোটসহ আরো কয়েকটি ছ্টো দলের প্রার্থীরাও প্রচারণায় নেমে পড়েন। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর কথা ছিল মঙ্গলবার থেকে। তবে সোমবার দুপুর ২টা থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে ওঠে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে প্রার্থী রয়েছেন ১২২ জন। এর মধ্যে বরিশালের ৬টি আসনে ৩৯ জন, পটুয়াখালীর ৪টি আসনে ২৩ জন, ভোলার ৪টি আসনে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন ১৫ জন, পিরোজপুর ৩টি আসনে রয়েছেন ২১ জন এবং বরগুনার ৩টি আসনে ১৫ জন চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন। এছাড়া ঝালকাঠীর দুটি আসনে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনের লড়াইয়ে রয়েছেন।
আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আ.স.ম ফিরোজ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এডভোকেট মজিবর রহমান সারোয়ার, জহির উদ্দিন স্বপন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, গোলাম মাওলা রনি ও বিএইচ হারুনসহ আরো বেশ কয়েকজন নামি-দামি নেতা এবারো দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। এর মধ্যে গোলাম মাওলা রনি আওয়ামী প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালী-৩ আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বিজয় লাভ করেও ২০১৪-তে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাননি। এরপর থেকে দলের সাথে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে দলের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী এক ব্যবসায়ী নেতার কারণে তাকে কারাবরণও করতে হয়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আকস্মিকভাবেই বিএনপিতে যোগ দিয়ে রনি পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়ন পান। এটা বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক হয়েছে। কারণ ঐ আসনটি কোনদিনই বিএনপির ভাগ্যে জোটেনি। তবে ২০০৮-এর নির্বাচনে দীর্ঘদিনের প্রার্থী খ.ম জাহাঙ্গীরকে বদল করে গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেয়ার পরেও রাজনীতিতে নবীন এ প্রার্থী ১ লাখ ২০ হাজার ভোট লাভ করেন। ঐ আসনে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোট প্রার্থী ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে বিশাল ব্যবধানে হেরে যান। এবার রনির প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিইসির ভাগ্নে এসএম শাহজাদা। তবে রনির পুরনো ভোটারের অর্ধেকও যদি তাকে গ্রহণ করে আর বিএনপির প্রায় ৬০ হাজার ভোটার সংঘবদ্ধ করতে পারলে রনির ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে।
এদিকে জাপা প্রার্থী মাসুদ পারভেজ নিজেকে বরিশাল-২ আসনে মহাজোট প্রার্থী দাবি করে নির্বাচনে থাকলেও তিনি নৌকার পরিবর্তে লাঙ্গলেই আছেন। ফলে এখানে মহাজোটে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। অপরদিকে এবারের ভোটের লড়াইয়ে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বাছাইয়ে মহাজোটকে যথেষ্ট স্বস্তি দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বরিশাল-৩, বরিশাল-৪, ভোলা-১, বরগুনা-২ ও ঝালকাঠী-২ আসনসহ দক্ষিণাঞ্চলের আরো কয়েকটি আসনে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর অনৈতিক আবদার ও দাবি রাখার পাশাপাশি অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ‘অনিচ্ছাকৃত বিপর্যয়’-এ পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও প্রার্থী বাছাইয়ে ‘অনুরোধে ঢেকি গিলতে গিয়ে’ও এ অঞ্চলে বিএনপির ঘরে কাঙ্খিত ফসল নাও উঠতে পারে, সাধারণ ভোটারদের অভিমত এমনটাই।
বরিশাল-৩ আসনে সেলিমা রহমানের পরিবর্তে এডভোকেট জয়নুল আবেদিনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মহাজোট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানকে। ফলে সুলতান এখন বাদশাহী খোশ মেজাজে আছেন। বরিশাল-৪ আসনে মহাজোটের পঙ্কজ দেবনাথের বিপরীতে সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের পরিবর্তে নাগরিক ঐক্যের জেএম নুরুল জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। যাকে স্থানীয় কতভাগ মানুষ চেনে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে এলাকার ভোটারদের মধ্যে। ভোলা-১ আসনে বিজেপি’র আন্দালিব রহমান পার্থর পরিবর্তে বিকল্প প্রার্থী তোফায়েল আহমদের বিরুদ্ধে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া ঝালকাঠী-২ আসনে সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টোর পরিবর্তে জেবা আমীন খান ও বরগুনা-২ আসনে নুরুল ইসলাম মনির পরিবর্তে এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া দল ও ফ্রন্টের জন্য খুব সুখকর খবর নাও আনতে পারে। তবে এসব পূর্বাভাস কেবল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বচনের ওপরই নির্ভরশীল।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনে ১২২ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯, বিএনপির ২১, জাতীয় পার্টির ৯, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩, ইসলামী আন্দোলনের ১৯ এবং জামায়াতে ইসলামীর ১ জন ছাড়াও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে এসব প্রার্থী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৬২ লাখ ২১ হাজার ১১০ জন ভোটার তাদের পছন্দের ২১ জন প্রার্থীকে এমপি নির্বাচিত করার কথা।
তবে সারা দেশের মত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার যথেষ্ট আগ্রহ ভোটারদের। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি বরিশাল সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি রোধে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করারও তাগিদ দিয়েছেন সাধারণ ভোটারগণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।