Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আজ ৪ ডিসেম্বর। আগের দিন শেষ বিকেলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিমান ঘাঁটিগুলোতে পাকিস্তানী জঙ্গি বিমানের হামলা এবং এ দিন রাতে নয়াদিল্লীর যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনায় ভারত যতটা সুবিধাজনক স্থানে ছিল, পাকিস্তান সে তুলনায় অনেক বেশি অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আরো সৈন্য ও রসদ প্রেরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এদিন পাকিস্তান বড় রকমের সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিশাখাপত্তনম নৌঘাঁটির উপকূলে পাকিস্তানের গর্ব সাবমেরিন ‘গাজী’ ধ্বংস করে ভারত। এদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণে ঢাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পাকিস্তান বিমান বাহিনী। সে সময় এদেশে মাত্র এক স্কোয়াড্রন স্যাবর জেট জঙ্গি বিমান মোতায়েন রেখেছিল পাকিস্তান। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় ও মুক্তি বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে তুমুল লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়। কুমিরা এলাকায় এদিন দুপুরের মধ্যে বিমান বন্দরটি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। রংপুরে ভরতখালির পাশে পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। উপমহাদেশে যখন এ অবস্থা তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদিন তুমুল উত্তেজনা চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে। এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করা। যার ফলে পাকিস্তান বাহিনী অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করার সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে যে, এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়ায় প্রস্তাবটি পাস হয়নি। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এ প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পাকিস্তানকে সমর্থনের প্রশ্নে এ দু’টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একমত নয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের অবস্থান ভারত ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে। অন্যদিকে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ায় পাকিস্তানের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখিত এক পত্র মারফত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহবান জানান। কিন্তু তখন সে স্বীকৃতি আসেনি।
এদিকে চলছিল প্রচন্ড লড়াই। ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেলস্টেশন দখল করেন। ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর। এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিয়ন্ত্রণে আনেন।
১৯৭১ সালের এদিনে একাত্তরের এই দিনে খোকসা, ফুলবাড়ী, লক্ষীপুর, মতলব, দেবীদ্বার, ঝিনাইগাতি, জীবন নগর হানাদার মুক্ত হয়। এসব স্থানে উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা।



 

Show all comments
  • Shoaib Alli ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    I was in that fighting under my compay commander now he no more.May Allah grants him jannat.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ