Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তফশীল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পরিবেশ অবনতিশীল -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম

তফশীল ঘোষণার শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ আরও অবনতিশীল হয়েছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকার জন্যই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মাষ্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত আছে। নৌকার পক্ষে হালে পানি না পাওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের শুধুমাত্র মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করেই সরকারের সাধ মিটছে না। এখন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘু ঘু চরিয়ে দিতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। রোববার (২ ডিসেম্বর) দুপরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সারাদেশে প্রার্থীসহ বেছে বেছে বিএনপি’র সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। প্রার্থীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আর এসব কিছু নেপথ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে দুটি শক্তিশালী কেন্দ্র-একটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যটি গণভবন, নির্বাচন কমিশন হুকুম-বরদার মাত্র। কমিশন শুধু ঐ দুই কেন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। দেশে বিরোধী দলশুন্য নির্বাচনী মাঠ তৈরী করতেই এসব ঘৃন্য অপকর্ম সাধন করা হচ্ছে। যেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, গুম করছে, গ্রেফতারের পর অস্বীকার করছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিলাভের পরও জেলগেট থেকে শ্যোন এ্যারেষ্ট করা হচ্ছে তাতে সারাদেশে এক রক্ত-শীতল করা আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজমান হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণকে ভোট থেকে দুরে রাখার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারী দলের অনাচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ঘটনা থেকেই মনে হয়-তারা ভোটারদের ভীতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সময় এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। সুপরিকল্পিত মাষ্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে নৌকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন হয় অন্ধ না হয় কানা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার সরকারের পক্ষে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া সবকিছুর উপরই সরকার যেন সিন্দাবাদের জ্বীনের মতো সওয়ার হয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে মনোনয়ন পত্রের দু’পাশ থেকে ধরে আছেন পুলিশের দু’জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। অথচ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন উদাস কবির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কোন ব্যবস্থা নিলো না।
রিজভী আরও বলেন, তফশীল ঘোষনার পর গাজীপুরের ওসি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পোশাক পরে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে কারো জানা নেই। অথচ সময়ের অজুহাত তুলে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়নি। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীর পক্ষে রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তাকে পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। অথচ কিছু রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের পক্ষপাতযুক্ত বেআইনী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এই পক্ষপাতের ধারা ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সুতরাং কমিশন নিজেরাই নিজেদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তিনি বলেন, ওসি ও এসপি পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখনই যেভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে তাতে নির্বাচনের দিনে কি পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এতো নিয়মভঙ্গের পরেও নির্বাচন কমিশনের চোখ বন্ধ রাখাটা আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে কমিশনের ভূমিকা সারাবিশ্বে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লিখিত হবে। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত দুইদিন আগে সদম্ভে ঘোষনা করেছিলেন-সারাদেশে কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে না। তবে সিইসির আচরণবিধি লঙ্ঘনের এধরণের তথ্য মানুষ খুব একটা গ্রাহ্য করছে না এজন্য যে, তফশীল ঘোষনার আগে ও পরে আওয়ামী লীগ রাস্তাঘাট দখল করে রাস্তার ওপর গেট বানিয়ে, বড় বড় নৌকা টাঙ্গিয়ে রেখেছে। আওয়ামী হার্মাদরা মহাসড়ক দখল করে বিশাল বিশাল বিলবোর্ড টাঙ্গিয়েছে। কমিশনের নির্দেশে নির্বাচনী কিছু ব্যানার-পোষ্টার তুলে ফেলা হলেও নৌকায় হাত দিতে কেউ সাহস পায়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-গোটা নির্বাচন কমিশনই নৌকায় চেপে বসে মাঝ নদীতে ভাসছে কিন্তু কোন কুল-কিনারা পাচ্ছে না।
বিএনপি নেতা সপু ও পটুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপি’র স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর সরফত আলী সপু এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটুকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী যুবদল গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন বাটকে গত পরশু বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছে তারা। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ নেয়া হলেও তার এখনও কোন সন্ধান মেলেনি। আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল ইসলাম পটুকে গ্রেফতার করা উদ্দেশ্যমূলক ও দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান। এছাড়া জসিম উদ্দিন বাট নিখোঁজ থাকার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রিজভী বলেন, তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই আটক করে নিয়ে গেছে। নিখোঁজ থাকার ঘটনায় তার পরিবার এবং দলের নেতাকর্মীরা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছে। এছাড়া গতকাল বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু’র নাটোরের বাসভবনে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নির্বাচনী মতবিনিময় সভা চলাকালে হঠাৎ করে জয়বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে আওয়ামী সশস্ত্র সন্তাসীরা সভার ওপর হামলা চালায় এবং রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু’র বাসভবন ব্যাপক ভাংচুর ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন রিজভী ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ