পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগে কৃষিঋণ বিতরণেও ব্যাংকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করছে। এর ফলে কমে গেছে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে কৃষি ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন খাগড়াছড়ির কমলছড়ি, গোলাবাড়ি, পেরাছড়া, ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক কৃষক। দলগতভাবে তারা সরকারি মালিকানা অগ্রণী ব্যাংকের খাগড়াছড়ি শাখায় আবেদনও করেছেন। কিন্ত ব্যাংক তাদের ঋণ দিচ্ছে না। শুধু খাগড়াছড়ির কৃষকই নয়, ফসল উৎপাদনের জন্য সুনামগঞ্জসহ সারাদেশের কৃষক চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না।
কৃষক যে আগের মতো ঋণ পাচ্ছেন না তার প্রমাণ মেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে অর্থ সংকটের কারণে কৃষিখাতের ঋণ বিতরণ প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ কমে গেছে। এই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ খাতে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৪২ কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) একই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছিল চার হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
খাগড়াছড়ি এলাকার কৃষক আলো চাকমা বলেন, গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা দলগতভাবে কৃষি ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোতে ঘুরেছি, কিন্ত ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা অর্ধশতাধিক কৃষক ঋণের জন্য অগ্রণী ব্যাংকের খাগড়াছড়ি শাখায় আবেদন করেছি, কিন্তু ঋণ দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচজনকে, তাও মাত্র ২০ হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, দালালকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ব্যাংক এক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয়, আর ঘুষ না দিলে প্রকৃত কৃষক ঋণ পায় না। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অগ্রণী ব্যাংকের খাগড়াছড়ি শাখার ব্যবস্থাপক অজয় কুমার চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যে সব কৃষকের আবেদনে কোনও ত্রুটি নেই, তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। আর যারা এখনও ঋণ পাননি তাদের পর্যায়ক্রমে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪১ লাখ পরিবার কৃষি ও পল্লী ঋণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেও তাদের ঋণ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ১৩ শতাংশ পরিবার কোনও ধরনের তদবির করতে না পারায় তাদের কৃষিঋণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আরও সাত শতাংশ পরিবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের খুশি করতে না পারায় ঋণ পায়নি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিঋণে বেসরকারি ব্যাংকের তুলনামূলক নজর কম। সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রায় আট শতাংশ ঋণ কৃষিতে, সেখানে বেসরকারি ব্যাংকের দুই শতাংশের কম। যদিও কৃষিতে তুলনামূলক খেলাপি ঋণ অনেক কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ ঋণ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক হলেও তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশি-বিদেশি খাতের আটটি ব্যাংক কৃষি খাতে কোনও ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং ওরি ব্যাংক। এছাড়া মধুমতি এবং সীমান্ত ব্যাংক কোনও ঋণ বিতরণ করেনি। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে কৃষিঋণ বিতরণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দেশনাও জারি করে। তখন থেকেই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে অনার্জিত লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। এদিকে তারল্য সংকটের অজুহাতে কৃষিঋণ বিতরণের এ বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংক মালিকরা। জানা গেছে, দেশের ৩০টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এখন নগদ টাকার সংকট চলছে। বাকি ব্যাংকগুলোও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমে সেপ্টেম্বরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর এতো কম প্রবৃদ্ধি আর দেখা যায়নি। আগের মাস আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অর্থ সংকট ছাড়াও ঋণ আদায় কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ বিতরণে বেশি আগ্রহী হচ্ছে না। এমনকি কৃষিঋণও দেখে শুনে দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর চাপে রয়েছে ব্যাংকগুলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।