পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় সেভাবে বাড়েনি। ফলে গত দুই বছর ধরেই চলতি হিসাবের ভারসাম্য নেতিবাচক প্রবনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ধাক্কা লেগেছে ব্যালান্স অব পেমেন্টে। ফলে ক্রমবর্ধমান রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে।
রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের তুলনায় রাষ্ট্রের অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে আমদানিতে। অনেক দিন ধরে ঘাটতি নিয়েই চলছে সরকারের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে আমদানিতে আট দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় হচ্ছে গড়ে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৬৯ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে রফতানি আয়ের প্রায় দ্বিগুন ৪ হাজার ৭৪৫ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার।
চলতি হিসাবের দীর্ঘদিনের এই ঘাটতি নেতিবাচক ধারায় নিয়ে গিয়েছিল ব্যালান্স অব পেমেন্টকেও। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ দুই নির্দেশকের নিম্নমুখিতায় কমতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা ৩১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অক্টোবরে রিজার্ভ আবার ৩২ বিলিয়নে উন্নীত হলেও এ রিজার্ভের মধ্য থেকে চলতি সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে এক দশমিক ১১২ বিলিয়ন ডলারের (১১১ কোটি) আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হবে। রিজার্ভের হিসাবায়নের মধ্যেই দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টের (এফসিএ) প্রায় ৮০ কোটি ও আইএমএফ থেকে নেয়া ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণও সম্পদ হিসেবে ধরা হয়েছে। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এসব দায় বাদ দেয়া হবে। তখন প্রকৃত বা নীট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমান গিয়ে দাঁড়াবে ২৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বালানি তেলসহ বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের নিম্নমুখী দর কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমিয়ে রেখেছিল। ফলে বাড়তে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সাল শেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ৩২ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এর পর থেকে হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওড়সহ দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চালসহ খাদ্যশস্যের উৎপাদন। ফলে আমদানি করতে হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য। একই সঙ্গে চলছে পদ্মা সেতু, রূপপুর ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো বৃহৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং’ বিভাগের তৈরি পরিসংখ্যান বলছে, গত অক্টোবর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ ২৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার। দেশের রিজার্ভ সম্পর্কে একই তথ্য দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। সংস্থাটির উপাত্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিসংখ্যান দিয়েছে আর্থিক খাতের তথ্য সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিইআইসি। তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কখনই দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের গন্ডি পেরোয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস ও নিট দুই ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করে। সম্পদ থেকে দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই গ্রস রিজার্ভের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। অন্যদিকে আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিজার্ভের নিট হিসাবকে প্রকৃত রিজার্ভ হিসেবে গণ্য করে।
সাধারণত স্বর্ণ ও সাতটি বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের অর্থ জমা রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে স্বর্ণ জমা রাখা আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে। মার্কিন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার ও চাইনিজ ইউয়ান সংরক্ষণ করা হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। দেশের রিজার্ভের প্রায় ৮০ শতাংশই রাখা হয় নিউইয়র্ক ফেডে। সিংহভাগ রিজার্ভ নিউইয়র্ক ফেডে রাখা হয়েছে মূলত নিউইয়র্কের রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বন্ডে বিনিয়োগ, আমদানি বিল পরিশোধ ও দাতা সংস্থার ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য।
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় এসব পেমেন্ট দেয়া হয়। নিউইয়র্ক ফেড ছাড়াও ইউরোপে রয়েছে রিজার্ভের ১৭ শতাংশ এবং কানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রত্যেকটিতে দুই শতাংশের নিচে। স্বর্ণ আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে।
রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে গ্রস ও নিট দুটিই সঠিক বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রিজার্ভের সম্পদের বিপরীতে কিছু দায়ও থাকে। দায়গুলো বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হয়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সম্পদ কত আছে, এ প্রশ্নে নিট রিজার্ভের পরিসংখ্যানই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমাদের দায়গুলো পরিশোধ করতে হবে। গ্রস রিজার্ভের ক্ষেত্রে যে সম্পদ হাতে আছে, তার সবটুকুই আমাদের সম্পদ নয়। রিজার্ভের মধ্যে আমি কতটুকুর মালিক, এ হিসাব বের করতে হলে অবশ্যই দায়গুলো বাদ দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।