পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছেই। দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ মার্কিন ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ৮৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। আমদানি পর্যায়ের ডলারের দর উঠেছে ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি বেড়ে গেছে, সেই হারে রফতানি বাড়েনি। এতে করে চলতি হিসাবের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে ডলারের চাপ বেড়েছে। যার সুযোগ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে নগদ ডলারের চেয়ে আমদানি পর্যায়ের দাম অনেক কম রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি বিরাজমান। তারপরও কিছুদিন সেই বর্ধিত দামেও স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়াতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসে আন্তঃব্যাংক ডলারের দামে বেড়েছে ৮ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৮৩ টাকা ৮৩ পয়সা দরে, যা এক বছর আগের তুলনায় ৩ টাকা বেশি। গত বছর একই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা ৮৩ পয়সা। আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা নিচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক গড় হিসেবে গত রবিবার প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৮৩ পয়সা।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, নগদ ডলারের দর সবচেয়ে বেশি উঠেছে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও ব্যাংক আল-ফালাহর। ব্যাংকগুলোর রোববার নগদ ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকই ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৮৬ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। গত রোববার সর্বনিম্ন দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে ইস্টার্ন ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক। ব্যাংকদুটি নগদ ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলোর মত মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।
মগবাজারের স্টকহোম মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৬ দশমিক ৫০ পয়সায়, আর আমরা ৮৫ দশমিক ৫০ পয়সায় কিনছি।
ডলারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ডলারের দাম বাড়ার মূল কারণ পণ্য ও সেবার বাণিজ্য ঘাটতি। অর্থাৎ আমদানি বাড়ছে সেই হারে রফতানি বাড়েনি। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে ঋণাত্মক হয়ে গেছে। আর এটি পূরণ করতে গিয়ে বাড়তি চাপে ডলারের দাম বেড়েছে।
ডলারের দাম বাড়লে দ্বিমুখী প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারকরা লাভবান হয়। তবে সমস্যায় পড়ে আমদানিকারকরা। কারণ আমদানি ব্যয় বাড়লে স্থানীয় বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। চাপ পড়ে মূল্যস্ফীতির উপর। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সবচেয়ে কষ্ট হয় গরিরের।
ডলারের দামের চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের অন্য দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে রফতানির বাড়াতে হবে। কিভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো যায় তার উদ্যোগ নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে আগস্ট শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ২১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা দরে) ১৭ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব (-) ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ (-) ঋণাত্মক কমেছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে ঘাটতি ছিল ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।