Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাজা নির্দেশনা দেবেন ভারত ও চীন নীতির সাউথ এশিয়ান মনিটরকে -ভুটানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

উত্তরে চীন এবং দক্ষিণে ভারতের মতো দুটো বৃহৎ প্রতিবেশীর উপস্থিতি স্বীকার করে নিয়ে ভুটানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী ও দ্রæক ন্যামরুপ শোগপা (ডিএনটি) দলের প্রেসিডেন্ট ড. লোটে শেরিং বলেন যে, তার সরকার “আগামী পাঁচ বছর দুই দেশের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলবে”, যদিও তার শাসনামলে “পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনা দিবেন রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক”।
দক্ষিণ থিম্পুর নির্বাচনী এলাকায় নিজের গ্রাম ওয়াং সিসিসনাতে গত বৃহস্পতিবার সাউথ এশিয়ান মনিটরকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ড. শেরিং বলেন যে, তিনি ভুটানের রাজধানীতে চীনের মিশন চালুর পক্ষে, যদিও ‘সবার (অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পক্ষ) সাথে কথা বলার পরেই এবং এর সুবিধা অসুবিধাগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই এটা করা উচিত’ বলে মনে করেন তিনি, কারণ এ পদক্ষেপের ফলে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ড. শেরিং বাংলাদেশে মেডিসিন নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং সেখান ১০ বছর কাটিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভুটানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে অসামান্য জয় পেয়েছে ডিএনটি। প্রতিদ্ব›দ্বী দ্রæক ফুয়েনসাম শোগপা (ডিপিটি) দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে হারিয়ে এই জয় অর্জন করে দলটি। নির্বাচনের দুই দিন আগে ১৬ অক্টোবর চূড়ান্ত দফা প্রচারণার সময়সীমা শেষ হয়। এই প্রচারণার সময় ভারতের সাথে থিম্পুর সম্পর্কের বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে কথা বলার কারণে ডিএনটি ও ডিপিটি উভয় দলকেই জরিমানা করে ভুটানের নির্বাচন কমিশন। কারণ এই আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক পরিমÐলে চীনের প্রবেশের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানের অস্বাভাবিক ভৌগলিক অবস্থানে ভারত-চীনের প্রতিদ্ব›িদ্বতা গত বছর দোকলামের ঘটনার সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছিল। ৭৩ দিনব্যাপী ওই অচলাবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়েও থিম্পু কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘নিরবতা’ বজায় রেখেছিল। আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এটাকে ভারতের প্রতি সমর্থন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যদিও অন্যেরা থিম্পুর চুপ থাকাকে নয়াদিল্লী-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি থেকে ভুটানের সরে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই ড. শেরিং বলেন যে, “ভুটানের পররাষ্ট্র নীতি প্রতি পাঁচ বছর পর পর বদলাতে পারে না, বিশেষ করে এটা যখন দেশের দূরদর্শী রাজার হাতে রয়েছে, যিনি এ ব্যাপারে দেশের জন্য ‘সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্তম’।
ড. শেরিং-এর দল চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত ডিপিটির বিরুদ্ধে লড়েছে। থিম্পুর পররাষ্ট্র নীতির বিশ্লেষকদের মতে, ড. শেরিংয়ের অপ্রকাশ্য ইঙ্গিতটা হলো, তিনি রাজা জিগমে খেসান নামগেল ওয়াংচুকের ভারতের সাথে সুনির্দিষ্ট ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের পথেই হাঁটতে চান।
ড. শেরিং বলেন, “আমরা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবো কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের একক কোন অবস্থান নেই কারণ ভুটানের পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে মহামান্য রাজার প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে”। তিনি আরও বলেন, তার দল যদিও থিম্পুতে আরও বিদেশী মিশন স্থাপনের পক্ষে, কিন্তু “এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাতারাতি নেয়া যাবে না এবং এ ধরনের সিদ্ধান্তের আগে এর সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলোও বিবেচনা করতে হবে”। ড. শেরিং বলেন যে, অন্যান্য দেশকে যখন থিম্পুতে মিশন চালুর আহŸান জানানো হবে, তখন ভুটানের প্রত্যাশা থাকবে যেন, “অন্যেরাও একই ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে”।
ড. শেরিংয়ের মতো, সাধারণভাবে ভুটান এবং বিশেষভাবে তার দল “রাজতন্ত্র, রাজার ভিশন এবং দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন, সেগুলোকে গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করে”।
ডিএনটি প্রধান বলেন, তাই আমাদের “সামাজিক কাঠামো, গভীর ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বিবেচনা করে এটা বলা ভুল ও অগ্রহণযোগ্য হবে যে, আমরা সামনের বছরগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশের ব্যাপারে তার কোন ভূমিকা চাই না”। তিনি আরও বলেন যে, ‘রাজা একজন আত্ম-নিবেদিত এবং দয়াশীল ব্যক্তি’।
ভুটানের সবগুলো রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতামূলক আচরণের আহŸান জানিয়ে ড. শেরিং বলেন, তার একমাত্র আশা হলো “দেশ যাতে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও জাতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাজন সৃষ্টি না হয়”। ‘কর্মসংস্থানের অভাবকে’ ভুটানের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে ড. শেরিং বলেন, “বিপুল সংখ্যক, প্রায় ২৫,০০০ মানুষের কোন কর্মসংস্থান নেই এবং তারা জনসংখ্যার প্রায় ২.৫% এবং এই সংখ্যাটা ‘বিশাল’।
রাজার ঘনিষ্ঠজন মাইকেল রুটল্যান্ড এর আগে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেছিলেন যে, “ভুটানের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলো কর্মসংস্থানের অভাব, যেটা ভুটানের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে দিতে পারে”। কীভাবে এই সমস্যা মেটাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শেরিং বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি আরও ‘বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ’ গ্রহণ করবেন।
নিজের শান্ত ও স্থিত বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ড. শেরিং বলেন, “সংস্থাকে বাদ দিয়ে আমার সরকার একটা কর্মসংস্থান বোর্ড গঠন করবে, কারণ কর্মসংস্থানের ঘাটতি মেটানোর জন্য স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার শ্রম দফতরের নেই। ডিএনটি এটাকে আরও এগিয়ে নেবে এবং অবকাঠামো এবং তরুণদের প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দেবে। আমাদের দলের অবস্থান হলো আমরা আমাদের তরুণদের দেশের বাইরে কাজ করতে পাঠাতে আগ্রহী নই, যদি সেটা প্রথম বিশ্বের কোন দেশ না হয়”।
ড. শেরিং বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে ডিএনটি একটা ঐক্যমত গড়ে তুলবে যাতে দলের মধ্যে কোন ভিন্নমত না থাকে। তিনি আরও বলেন যে, “আরও তিনটি দল রয়েছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমরা সবার সাথেই মাঝে মাঝে বসবো যাতে ঐক্যমত গড়ে তোলা যায়”।
ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউরোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন ড. শেরিং। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ডিএনটিতে যোগদানের আগে শেরিং একজন কনসালটেন্ট সার্জন ও ইউরোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। থিম্পুর ১৫ কিলোমিটার দূরে ওয়াং সিসিসনা গ্রামের একটি বিনয়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা ড. শেরিংকে রাজার ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়, যার সাথে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন তিনি। সেই সাথে তিনি দেশের দূর-দূরান্তের মানুষদেরকে স্বাস্থ্য সেবা দিতেও কাজ করেছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ