Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সউদী বাদশাহর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী বাদশাহ এবং পবিত্র দু’টি মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার বিকালে আরগায় রাজ প্রাসাদে বাদশাহ’র সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারা বৈঠকে দু’দেশের পারস্পরিক র্স্বাথ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।
সউদী বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকের পর রিয়াদে নিজস্ব জমিতে বাংলাদেশের দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, সউদী আরবের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক। খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। সউদী বাদশাহকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আসবেন।
এদিকে সকালে রাজপ্রাসাদে সউদী আরবের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সউদী চেম্বার এবং রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সউদী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই ব্যাপারে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। সউদী আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পারস্পরিক স্বার্থেই আপনাদেরকে বাংলাদেশে ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা যাতে আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় একে অপরের হাতে হাত রেখে চলতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সউদী উদ্যোক্তাদের দেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাত যেমন পুঁজি বাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্য প্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে হাল্কা প্রকৌশল শিল্প, ব্ল-ইকোনমি, গবেষণা এবং উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি এবং সমুদ্র সম্পদ এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্পে এবং সেবামূলত খাত যেমন ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি, লজিষ্টিক এবং মানব সম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ভাল বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদণার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিকহারে মুনাফা নিয়ে দেশে ফেরার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। যার মধ্যে রয়েছে- আইন দ্বারা সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানীতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানীর সুযোগ, টেমিট্যান্স অন রয়্যালিটি, শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা এবং লাভ এবং পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাবার সুবিধা।
অন্যান্য সুবিধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা। যার মধ্যে রয়েছে- ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশ সুবিধা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ এবং পানি প্রাপ্তির সুবিধাও রয়েছে। রয়েছে ভাল ক্রেডিট রেটিং, স্বল্প ঝুঁঁকি এবং দ্রুত প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার সুবিধা। এই সবগুলো একত্রে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির সুবিধাই নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দেশের ভৌগলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
সরকারের দেশে একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলো (ইপিজেড) শতভাগ রপ্তানী নির্ভর। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। সউদী আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন। শেখ হাসিনা এই শিল্পাঞ্চলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য দেশে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই দ্রুত রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক খাতে দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরী পোশাক রপ্তানীকারক দেশ। যার রপ্তানীর পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপানকারী, ৪র্থ বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় বৃহৎ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ওষুধের ৯৮ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ১২৫টি দেশের বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানী হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পেরও দেশে ক্রমবিকাশ ঘটছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মধ্যম আকারের সমুদ্রগামী বেশ কিছু জাহাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করছি।
রিয়াদে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস ভবন
বুধবার বিকালে রিয়াদের কূটনৈতিক কোয়ার্টারে ৭ হাজার ৯৫০ বর্গমিটার আয়তনের ওই প্লটে নির্মিত দূতবাস ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে একটি গাছের চারাও তিনি রোপণ করেন।
এতদিন রিয়াদে ভাড়া বাড়িতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাজ চলত। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের জুনে সউদী আরব সফরে গিয়ে নতুন দূতাবাস ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন। ওই বছর ২৫ অগাস্ট চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন হাজার ৮১৮ দশমিক ৬৮ বর্গমিটার আয়তনের ওই দূতাবাস ভবনের সেবা প্রত্যাশীদের অপেক্ষার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপরিসর অপেক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সউদী বাদশাহর আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে মঙ্গলবার সউদী আরব পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরে সউদী আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মক্কায় ওমরাহ পালন করবেন। সফর শেষে শুক্রবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।#



 

Show all comments
  • ডাঃ এস এম জাহিদ হাসান ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৫৭ এএম says : 0
    আশা করি এতে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে।
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৫৭ এএম says : 0
    প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৫৮ এএম says : 0
    এই সফর দেশের জন্য ভালো খবর বয়ে আনবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:৫৯ এএম says : 0
    সউদীসহ মুসলীম দেশগুলোর সাথে আমাদের আরও সম্পর্ক উন্নয়ন করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • কাউছার হোসাঈন ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:৩০ এএম says : 0
    সৌদিআরব এর পাশি-পাশি তুরস্কের সাথে সহ বিশ্বের সকল মুসলিম দেশ গুলোর সাথে আরো সম্পর্ক করা দরকার।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Jamal ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম says : 0
    Assalamu Alikum In Sa Allah Good Plan
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:৪৬ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর এই সফর সাফল্য হয়েছে সংবাদে এমনই মনে হচ্ছে, সাথে সাথে মক্কায় আল্লাহ্‌র ঘর তাওয়াফ করে মদীনায় নবী করিম (সাঃ) এর মাজার যিয়ারত করে আসছেন এটাও একটা শুভ লক্ষণ। আল্লাহ্‌ জননেত্রী শেখ হাসিনার মনের আশা পুরন করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ