Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে বিশ্বে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ - রামকৃষ্ণ মিশনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১:০০ এএম, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়েই এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গতকাল বিকালে রাজধানীর টিকাটুলী রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ এবং লালবাগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন শেষে পৃথক শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথমে রামকৃষ্ণ মিশন ও পরে ঢাকেশ্বরীতে যান প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকেশ্বরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনেরা নিরাপদে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবেন। কারা বেশি সংখ্যা, কারা কম সংখ্যা স্টো বড় কথা নয়। যে যার ধর্ম উৎসবের সাথে, স্বাধীনভাবে পালন করবে। সেটা নিশ্চিত করা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত হানতে দেখেছি, ধর্মীয় নেতা, আমাদের দলের নেতাকর্মী কেউ রেহাই পেত না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সকলে মিলে স্বাধীন করেছি। সকলে মিলেই গড়ে তুলবো। কিন্তু সে চেতনা ধ্বংস করে দেয়া হয়।
বিকাল সাড়ে তিনটায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে পূজা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-প্রবাসের হিন্দুু সম্প্রাদায়কে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন সরকার প্রধান বলেন, সুষ্ঠুভাবে এই উৎসব সম্পন্ন হোক। উৎসবমুখর পরিবেশে সমপন্ন হোক। সেটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সবাই যার যার অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। কারা সংখ্যায় বেশি, কারা সংখ্যায় কম, স্টো বড় কথা নয়, যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। উৎসবের সাথে, স্বাধীনভাবে পালন করবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাই আসুন, সবাই মিলে আমরা এই দেশকেও একসঙ্গে গড়ে তুলি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এখানে সবাই যার যার ধর্ম পালন করবো। প্রত্যেকটি উৎসবে সবাই ভাই-বোনের মতো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ উৎসবটা আমরা উদযাপন করে যাই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হোক, সমৃদ্ধশালী হোক, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ হোক। এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। কিন্তু আমরা দুই বোন বেঁচে আছি। আমাদের জীবনে একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশটাকে আমরা গড়ে তুলবো। বাংলার দরিদ্র মানুষকে ক্ষুধা-অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা করে প্রত্যেকের জন্য একটা উন্নত জীবন দেবো।
শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনে এখানে আসতে পেরে সত্যিই আমি খুশি। আগামীকাল দেশের বাইরে যাচ্ছি। কাজেই চিন্তা করলাম, যাওয়ার আগে অন্তত আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যাই।
মুসলিম ধর্মাম্বলীদের মতো হিন্দুদেরও হেবার মতো দান করার ব্যবস্থা এবং মসজিদভিত্তিক শিক্ষার মতো মন্দিরভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দিনি বলেন, বাংলা নববর্ষকে নতুন চেতনায় নিয়ে এসেছি। এই দিনটাকে সকলে মিলে এক সাথে পালন করি। আমরা চেষ্টা করেছি, সকল ধর্মের মানুষের সমস্যা সমাধান করার।
তিনি বলেন, মুসলমান ধর্মের একটা নিয়ম আছে, বাবা-মা সন্তানকে সম্পত্তি দিতে গেলে হেবা করে দিতে পারে। এখানে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না, মাত্র একশ টাকা খরচে লিখে দিতে পারে। এটা হিন্দু ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মে ছিল না। আমরা সেটা আইন করে দিয়েছি, হিন্দু সম্প্রদায় তাদের উত্তরাধিকারকে সম্পত্তি দিতে পারবে ঠিক হেবা আইনে যেমন আছে, একশ টাকায় মূল্যের খরচে লিখে দিতে পারবে। আমরা মসজিদ ভিত্তিক যেমন গণশিক্ষা চালু করেছি, ঠিক মন্দির ভিত্তিকও ধর্মীয় শিক্ষা চালু করেছি। সেবায়েত পুরোহিতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক ধর্মের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের স্বামীজী ধ্রুবাবেশানন্দ প্রধানমন্ত্রীর হাতে শারদীয় শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচ টি ইমাম, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ আওয়ামী লীগ নেতাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক শোডাউন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নির্দেশে ১৩টি ওয়ার্ড যুবলীগের নেতাকর্মীরা পলাশী মোড় থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত এবং ১৫ টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ইত্তেফাক মোড় থেকে রামকৃষ্ণ মিশন পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে এবং জননেত্রীর আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হাত নেড়ে অভিভাবদনের জবাব দেন। এদিকে যুবলীগ দক্ষিণের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, ও লালবাগের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সমর্থকরাও প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ