পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপি-যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘জগাখিচুিড়র ঐক্য’ হিসেবে অবিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, খুনি ও দূর্নীতিবাজদের সঙ্গে ঐক্য গড়েছেন ড. কামাল হোসেন গং। নৌকা থেকে নেমে ধানের শীষে হাল ধরেছেন তিনি। সঙ্গে জুটেছে আরও কিছু খুচরা, আধুলি। এই জগাখিচুড়ির ঐক্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র তরী পার হতে পারবে না। গতকাল পদ্মা সেতু পরিদর্শন শেষে মাদারীপুরের শিবচরে এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হাত ছিলো। তা নাহলে এমনিতে খালেদা জিয়া ভোরে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান! এতেই প্রমাণিত তিনি ওই ঘটনায় জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১২টায় পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা অংশে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করে। এসময় তিনি পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-টুতে যোহরের নামাজ আদায় করেন এবং দুপুরের খাবার খান। বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কাঠাঁলবাড়ি ফেরি ঘাট এলাকায় আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হন। প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে টানা ৩২ মিনিট বক্তৃতা করেন। বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেন।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ইংগিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ঐক্য করেছেন। কার সাথে? তিনি (কামাল হোসেন) বড় বড় কথা বলেন দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসের সাথে সম্পৃক্ত, খুনি। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, দুর্নীতিবাজ, এতিমের টাকা যারা মেরে খায়; আজকে তাদের সঙ্গে ঐক্য করেছে কে? যাদের সাথে তিনি হাত মিলিয়েছেন, তারা দেশে খুনিদের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, অবশ্য কামাল হোসেন এটা করতেই পারেন। কারণ তিনি কালো টাকা সাদা করতে পারেন। তারেক জিয়া, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করার কারখানা তৈরি করেছেন। আমি কামাল হোসেনকে সাবাশ জানাই। কারণ তিনি আমাদের দল ছেড়ে নৌকা থেকে নেমে ধানের শীষের মুঠো ধরেছেন। যে ধানের শীষে শীষ নেই, আছে শুধু চিঁটা। রতনে রতন চিনে, শিয়ালে চিনে কচু। এই কারণেই তাদের সাথে কামাল হোসেন গংরা হাত মিলিয়েছেন। তার সাথে জুটেছে আরও কিছু খুচরা, আধুলি। এরা সব ঐক্য করেছে। তাদের সাথে ন্যায়ের ঐক্য হতে পারে না। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যারা খুন করেছিলো সেই খুনি মোশতাকদের পুনর্বাসন করেছিল জিয়াউর রহমান। আর ২১ আগস্ট আমাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব¡ শূন্য করতে হামলা করেছিলো খালেদা জিয়া। আইভি রহমানসহ অনেককে তারা খুন করেছে। এমনই এই ভয়াবহ হামলার আলামত নষ্ট করে জজ মিযা নাটক সাজায়। এরা খুনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। মানুষের ওপর নির্যাতন করে। ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে ৩ হাজার ৮শ’র মতো মানুষকে হত্যা করে। অগ্নি-সন্ত্রাসে যারা বেঁচে আছে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
‘জামায়াত-বিএনপি এক জোট’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তর সালে জামায়াত এদেশে বর্বরতা চালিয়েছে। আর সুযোগ পেলেই এখনও এরা মানুষ হত্যা করছে। ২০০৯ সালে তৎকালীন পিলখানা হত্যাকান্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। বিডিআর বিদ্রোহের পেছনেও বিএনপি-জামায়াতের হাত ছিলো। নয়তো খালেদা জিয়া ১২টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন আর এমনিতে ওইদিন তিনি ভোরেই ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান! এতেই প্রমাণিত তিনি ওই ঘটনায় জড়িত। বিডিআর বিদ্রোহে দলগত ভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ৫৭ সেনা অফিসার প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩জনই আওয়ামী পরিবারের সঙ্গে জড়িত।
আওয়ামী লীগের সাফল্য ও সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে কোন ঘর অন্ধকার থাকবে না। সব ঘরে আলো পৌছে দেয়া হবে। যেটা কেউ করতে পারে না, সেটা আওয়ামী লীগ করতে পারে। আমরা এদেশকে শিল্প উন্নয়ন দেশ করতে চাচ্ছি। কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও যুগোপযুগি ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে যেতে চাই। এজন্যে কৃষি খাতে কৃষি উপকরণসহ নানা রকমের ভুর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। এখন কৃষক দশ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে সুবিধা নিতে পারছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে পারছে। যা এই আওয়ামী লীগ সরকার এসব করছে।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে উপস্থিত জনতার প্রতি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় এনেছেন। আমরা সেই ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করেছি। এই নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ায় এদেশের মানুষ মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে; স্বাধীনতা পেয়েছে। এখন উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি এসেছে। তাই আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দিবেন।
দুপুর ২টার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের পরিচালনায় জাতীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদের উপ-নেতা সাজেদা চৌধুরী, শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুরে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সার্বিক পরিচালনা ও সমন্বয়ক ছিলেন নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত হওয়ার আগে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে স্থানীয় ও জাতীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন। জনসভায় প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করেন। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুরের লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ২টা পর্যন্ত স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় সভা পরিচালনা করেন শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ সেলিম। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়াশী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, মাদারীপুর পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, বর্তমানের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে গিয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শন, মূল নদী শাসন কাজ সংলগ্ন স্থায়ী নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নামফলক উন্মোচন এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা ১ হাজার ৩৯০ মিটার ৬ লেন সড়কের কাজের উদ্বোধন করেন। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।