Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণের শক্তিতেই পদ্মা সেতু করছি

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজায় আয়োজিত সুধী-সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

মঞ্জুর মোর্শেদ মুন্সীগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

পদ্মা সেতু চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদান (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আরো ২ শতাংশ বেড়ে ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে এদেশের জনগণের শক্তি সহযোগিতা আর ভরসায় নিজস্ব অর্থায়েনে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এদেশের জনগণের উপর ভরসা ছিল এবং এখানো আছে তাই দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সমগ্র বাংলায় এলিভেটেড রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। গতকাল রোববার পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে আয়োজিত সুধি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনারবাংলা গড়তে আমি কাজ করছি। বিশ্বের দরবারে দেশকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে আনার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূিচ হাতে নিয়েছি। দেশের যমুনা সেতুসহ অসংখ্য সেতু করেছি। দেশের প্রত্যেক বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে; সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। তিনি অতিতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বি,এন,পি সরকার সে কাজ বন্ধ করে দেয়। ২য় বার ক্ষমতা এসে কাজ শুরু করলে গ্রামীন ব্যাংকের তৎকালীন এমডি ড. ইউনুস ব্যাক্তি স্বার্থের কারণে আমিরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনকে কাজে লাগিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বন্ধ করে দেন।
নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধান মন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা আমার, আমার পুত্র ও বোনের বিরুদ্বে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে; কানাডার আদালতে সে অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। যারা গরিবের টাকা মারে, ঘুষের টাকা খায়, সুদ নেয় তারা দেশের মানুষকে ভালোবাসতে পারে না। তিনি বলেন, বাঙ্গালীকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রের মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আব্দুল আজিজ, সাগুফতা ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা, আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
শেখ হাসিনা হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ খুব স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই পদ্মা সেতুর ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্য। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে যারা সম্পৃক্ত তাদের ধন্যবাদ। যারা এ কাজের জন্য নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা জমি দিয়েছেন তাদের আমরা প্লট বরাদ্দ দিয়েছি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে বহুমুখী সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষ চলাচল করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। সেতুর ওপর দিয়ে চলা ট্রেন ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর যাবে। আবার আরেকটি লাইন ভাঙ্গা-শরীয়তপুর হয়ে বরিশাল যাবে। সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার আরও প্রায় ২ ভাগ বাড়বে। প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগ হয়ে যেতে পারে। মানুষের অবস্থার আরও উন্নতি হবে। আর্থিক দুরবস্থা থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে মানুষকে সাহায্য দিচ্ছি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিচ্ছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করবো।
ড. ইউনূসের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো অনুমোদন ছাড়াই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন এবং সরকারি বেতনও নিতেন। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। তাকে আমরা কখনও অসম্মান করতে চাইনি। অর্থমন্ত্রী ও গওহর রিজভী ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তাকে এমিরেটাস অ্যাডভাইজার করার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন দুইটা। একটা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরেকটা সরকারের বিরুদ্ধে। কোর্ট চাইলে সেই বেতন ফেরত নিতে পারত। এমডি পদ হারিয়ে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আটকানোর চেষ্টা করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা রাজনীতিকে ছাপিয়ে আজ রাষ্ট্র নায়কে পরিণত হযেছেন। তিনি ভাবেন পরবর্তি প্রজন্মের জন্য। সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের চলমান কাজের উদ্ভোধন আর রেল সংযোগ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের রেল ও সড়ক যোগাযগো ব্যবস্থা এক নতুন মাইল ফলক সূচনা হতে যাচ্ছে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার দৃঢ় চেতনায় আমাদের নিজস্ব টাকায় সেতুর কাজ চলছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে পদ্মা সেতু হতো না রেল সংযোগ থাকতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে জাতীর সেবা করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশে দেশের ৬টি বিভাগের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সোয়া ১১টায় হেলিকপ্টারে করে মাওয়ার দোগাছির পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-১ এর মাঠে অবতরণ করেন। এরপর গাড়িতে করে সেতু এলাকায় যান। এদিকে সুধি সমাবেশ জেলার ৬টি উপজেলা থেকে আওয়ামলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই সমাবেশ স্থল ও এর আশপাশে ভীড় জমাতে থাকে। মুহমুর্হ শ্লোগানে পুরো এলাকায় নেতা-কর্মীদের আনন্দ-উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ