Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৮ দিনেও শেষ হয়নি তদন্ত

ওসিকে পিটিয়ে হাড় ভাঙার অভিযোগ

আবদুল্লাহ আল মামুন : | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আবদুর রশিদকে পিটিয়ে হাড় ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত গত ৮ দিনেও শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার। এদিকে, নিজেদের মধ্যে এমন মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনায় খোদ পুলিশ বাহিনীর মধ্যেইে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মনে করেন, সাধারণ বিষয় নিয়ে এভাবে দ্ব›দ্ব-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া মোটেও সমীচীন নয়। এতে নিজেদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। গত ৫ অক্টোবর এক পুলিশ সুপারের বাড়ির কর্মীদের মারধরে কাঁধের হাড় ভেঙে গেছে বলে রমনা থানায় মামলা করেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আবদুর রশীদ। একইদিন সন্ধ্যায় সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযুক্ত নাজমুল আলম ও মো. মিলন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীনের বাসার কেয়ারটেকার।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে শিল্পাঞ্চল থানায় ফেরার পথে ভিকারুনন্নিসা নূন স্কুলের ২ নম্বর গেটের সামনে এক বন্ধুর সাথে সাক্ষাত হয় ওসি রশীদের। সে সময় বন্ধু মো. সালাম ওসিকে অপেক্ষায় রেখে চা আনতে গেলে তিনি রাস্তার পাশে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় অভিযুক্ত নাজমুল আলম ও মো. মিলনকে দিয়ে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের পূর্বপাশের দেয়াল সংলগ্ন ফুটপাত ও রাস্তা পরিষ্কার করাচ্ছিলেন এক মধ্যবয়সী নারী। তারা ওসিকে গাড়িটি সরিয়ে নিতে বললে ওসি অল্প সময়ের মধ্যে গাড়িটি সরাবেন বলে তাদেরকে জানান। কিন্তু তাৎক্ষণিক না সরানোয় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়। ওসি এজহারে আরও অভিযোগ করেন, ওই দুই কর্মচারী ওসি রশিদ ও তার বন্ধুর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবং রশীদকে এলোপাতারি মার দেন। একপর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৬১/বি/এ নম্বর ‘কনকর্ড মেঘনলিয়া’র পার্কিং ফ্লোরে নিয়েও রড দিয়ে পিটিয়ে মাথায় আঘাত করেন এবং তার বাম কাঁধের হাড় ভেঙে দেয়। তবে যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
রমনা থানা সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের খবর পেয়ে রমনা থানার পরিদর্শক (অপারশেনস) মো. মাহফুজুল হক ভূঞাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহতদের উদ্ধার করেন এবং নাজমুল আলম ও মো. মিলনকে আটক করেন। এ ছাড়া পরে আব্দুর রশিদকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ৬ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মো. জুলফিকার আলী সরদার দুই আসামিকে কোর্টে পাঠান। ওইদিন দুই আসামীদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন চাইলে পুলিশের বিরোধিতার কারণে সেনিদের মতো তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৭ অক্টোবর ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে নিজ জিম্মায় জামিন নিয়েছেন শামীমা ইয়াসমীন নামে সিআইডির এক বিশেষ পুলিশ সুপার। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, নাজমুল আলম ও মো. মিলন তার বাসার কর্মচারী। বাদীর সঙ্গে তাদের ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই মামলার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি সমঝোতার উদ্যোগ নেবেন বলেও আদালতকে জানান। পরে শুনানি শেষে ঢাকা সিএমএম আদালত ওই এসপির জিম্মায় দুই কেয়ারটেকারকে জামিন দেন।
এদিকে, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনায় পুলিশের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, সাধারণ বিষয় নিয়ে এমন সংঘর্ষ হলে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হবে। যা পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের ক্ষেত্রে অস্বস্থি তৈরি করতে পারে।
গতকাল মামলার তদন্ত কার্যক্রম কোন অবস্থায় আছে জানতে রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলামকে কল করলে তিনি বলেন, ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে ঘটেছে। তাই নিজস্বভাবেই মিটমাট বা সমাধান করার চেষ্টা চলছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
রমনা জোনের উপকমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, উভয় পক্ষেরই অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তবে তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানাকে কল করা হলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় ঘটনাটির আপডেট বলতে পারবো না। তবে সংশ্লিষ্টরা নিজস্বভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওসি

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ