Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আত্মতুষ্টি মানেই পতন

গণভবনে সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

‘আত্মতুষ্টিতে থাকা যাবে না; আত্মতুষ্টিতে ভোগা মানেই পতন’ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন শেষে দেশে ফিরেই গতকাল গণভবনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি দলের নেতাকর্মীদের এই সতর্কবার্তা দেন। নির্বাচনী প্রচারণায় নামার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শত বাধা-ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই ক্ষমতায় আসতে হয়েছে; আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই বিশ্ব দরকারে দেশ আজ আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। জনসমর্থন থাকায় ও একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারায় টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আত্মতুষ্টির জন্য ১৯৯১ সাল এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগকে যাতে এবার ‘খেসারত’ দিতে না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় দলের সাফল্য সব জায়গায় তুলে ধরতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে আওয়ামী লীগই কেবল দেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানকালে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘স্পেশাল ডিস্টিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ পুরস্কার অর্জন করেন শেখ হাসিনা। মর্যাদাপূর্ণ এই দুই পুরস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তাহব্যাপী তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান, বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠককে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানবিকতা দেখানো এবং রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতায় অবদানের জন্য ইন্টার প্রেস সার্ভিস এবং গ্লোবাল হোপের কাছ থেকে পাওয়া দুু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সুরেই শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে বলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত আগেই ছিল। এখনো এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র অনবরত অব্যাহত আছে।
ভোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই এখন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেন; কিন্তু তারা জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের কথা ভুলে গেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। গত সাড়ে ৯ বছরে উপনির্বাচন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ দেশে ৬ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ’ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেকোন ধরণের কুৎসা রটনা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রত্যেকটি আসনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। যাতে করে ১৯৯১ সাল এবং ২০০১ সালের মতো আওয়ামী লীগকে খেসারত দিতে না হয়। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের ভিতরে-বাইরে থাকা ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই সময় একটি অংশ আমাকে বাদ দিয়েই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিল। আর এটা করতে গিয়ে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ভুল প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়। এদেশে একটা ষড়যন্ত্র সব সময়ই চলে আসছে যাতে আওয়ামী লীগ অথবা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারে। তাদের একটাই ভয় তা হলো জনগণ সেই নেতৃত্বের ওপর ভর দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই সব ব্যাপারে আমাদের নেতা কর্মীদেরকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে অনেক খুনী এবং বিশ্বসঘাতকের জন্মও এদেশে হয়েছে। যারা এই মাটির সন্তান হয়েও বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়কে কখনও মেনে নিতে পারেনি। তারা এক সময় পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিল। এখনো পাকিস্তানী প্রভূদেরই তারা দাসত্ব করতে চায়। তাদের থেকে যাওয়া বংশধরেরা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।
’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাধ্য হয়ে ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটানো এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে দেশে ফিরে আসার সময়কার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এমন একটা সময়ে আমি দেশে ফিরেছিলাম, যখন দেশে খুনীদের রাজত্ব চলছিল; যুদ্ধাপরাধীরাই দেশ চালাচ্ছিল। তারা আমার উপর হামলা চালিয়েও বেশ কয়েকবার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই আমাকে বাঁচিয়েছে। বারবার মৃত্যুকে মুখোমুখি নিয়ে অনেকেই চলতে পারেন না। সে সাহসও পায় না। তারপর আবার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবিলা করতে হয়েছে। ’৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে জড়িত ছিল এমন অনেকের বংশধরদের একটা শ্রেণি দেশে রয়ে গেছে। তাদের চক্রান্ত তো অনবরত চলছে। তারা জানে যে নিজেরা ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সাথে পারবে না। তারা জানে যে রাজনৈতিক দল করতে পারবে না। তারা মাঠে যেতে পারে না। কিন্তু তাদের লোভ ক্ষমতা। যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়। এই ক্ষমতার লোভে ’৭১ এর পরাজিত শক্তির সঙ্গেই তারা হাত মেলায়, খুনি-ঘাতকের সঙ্গে হাত মেলায়। তারা সারাক্ষণ আমাদের বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় নেতাকর্মীদের সতর্ক ভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষ্যে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, কিছু পত্রিকা অনেক তথ্য নিয়ে বসে আছে; এটা ভেবে যে তারা নির্বাচনের সময় একটার পর একটা ছাড়বে। যেখানেই আমাদের কোনও অর্জন, যেখানেই মানুষ একটা বাহবা দিচ্ছে; সেখানেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। আর আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেই হোক বা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেই হোক, সেগুলোকে খুব গুরুত্ব দিয়েই আমাদের লোকগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারে লেগে যায়। কাজেই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, বাংলাদেশকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন বিশ্বে মর্যাদার আসনে। যেকোন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে তিনি যেতেন সেখানেই তিনি থাকতেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাঙালি জাতি বিশ্বে সেই মর্যাদার আসনটি হারিয়ে ফেলে। আমরা সেই হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে সবসময়ই সচেষ্ট ছিলাম। তাই বঙ্গবন্ধু খুনীদের বিচার করেছি এবং দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছি। আমরা জাতির পিতার খুনী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করে জাতির ললাটে লেপ্টে থাকা কালিমা দূর করেছি। জাতির পিতা যেমনটি বলেছিলেন, বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, সেটা আজ বিশ্বে প্রমাণিত হয়েছে। #



 

Show all comments
  • Mojibur Rahman ২ অক্টোবর, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
    United the party no flights each other in general country is going to progress but general public not satisfied as I noticed when I went to Bangladesh (13/8 /2018 to 5/9/2018) SO please find out and take necessary action overall due to your MP, local leader, parties workers(some) I asked the Rickshaw wala, shopkeeper those are not closely related max. answer negative
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ