Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই -জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১০:০৪ এএম

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে তার আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকরের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ কওে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ ধরে প্রতিবছরের মত এবারো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৯ মিনিট স্থায়ী ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণসহ বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের কথা বিশ্বসভায় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের একমাত্র সরকার প্রধান, যিনি ১৫ বার সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমি পাঁচ-দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার-এর মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে, মিয়ানমার মৌখিকভাবে সবসময়ই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা রকান কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা সাধ্যমত তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করেছি। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এজন্য আমি তাদের সকলের প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যতদিন তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে না পারবেন, ততদিন সাময়িকভাবে তারা যাতে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, সে জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে আমরা নতুন আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে যেতে পারেন তার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাসবাদসহ সকল সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালিত হতে দেব না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।
সহিংস উগ্রবাদ, মানবপাচার ও মাদক প্রতিরোধে বাংলাদেশের সকল শ্রেণি- পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার নীতি যে বিশেষ সুফল দিয়েছে, সে কথাও জাতিসংঘ অধিবেশনে তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, সাহস ও সাফল্যের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। বাংলাদেশ গত ত্রিশ বছরে ৫৪টি শান্তি মিশনে এক লাখ আটান্ন হাজার ৬১০ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিশেষ অবদান রেখেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১৪৫ জন শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন আবাসভূমির দাবির বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে। তিনি ফিলিস্তিন সমস্যার আশু নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, “ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন আজও অব্যাহত রয়েছে যা আমাদের মর্মাহত করে।
ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের কাউন্সিলের সভাপতি হিসাবে বাংলাদেশ এ সংস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ