Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন জাদুঘরে রূপ নিচ্ছে

বাড়ির দলিল ও চেক হস্তান্তর কাল

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিচ্ছে সরকার। রোজ গার্ডেন নামক পুরাকীর্তি বাড়িটি আগামীকাল রোববার গণভবণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ির রেজিস্ট্রেশন, দলিল ও চেক হস্তান্তর করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক কর্মসূচিতে এ তথ্য জানা গেছে।
নামে গার্ডেন বা বাগান হলেও এটি মূলত একটি বাড়ি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। সে কারণে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নেয়ার প্রস্তাব করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। ঐতিহাসিক জায়গা হিসেবে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা হিসেবে ক্রয় করা হচ্ছে। আগামীতে এটিকে জাদুঘরে রূপ দেওয়া হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিগগির এ কাজ শুরু করবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার ইনকিলাবকে বলেন,আগামী রোববার গণভবণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ির রেজিস্ট্রেশন, দলিল ও চেক হস্তান্তর করবেন । বাড়িতে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। সে কারণে বাড়িটি সরকারি ভাবে ক্রয় করা হচ্ছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আগামী রোববার পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন টি সরকার কিনে নিচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ক্রয় করার পরে আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।
জানা গেছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুসারে সরকার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে রোজ গার্ডেন ক্রয় করছে। এর আলোকে গত আগস্ট মাসে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে গণখাতে ক্রয় বিধি অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় বাড়িটি কিনে নেয়া হবে। ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবে রোজ গার্ডেনের ঐতিহাসিক দিক ও মালিকানাপরম্পরা তুলে ধরা হয়। ঋষিকেশ দাস নামের এক ধনাঢ্য ও শৌখিন ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর এই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। দোতলা এই বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের চারা লাগান তিনি। বাড়ির নাম রাখেন রোজ গার্ডেন। সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি জলসাঘর রয়েছে, যার মেঝে শ্বেতপাথরে তৈরি। বাড়ির সামনের অংশে শানবাঁধানো পুকুর। কিন্তু বাড়িটি পুরোপুরি সাজিয়ে তোলার আগেই দেউলিয়া হয়ে যান ঋষিকেশ দাস। ঢাকার তখনকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ১৯৩৬ সালে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। আবদুর রশীদ সেখানে একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন এবং রোজ গার্ডেনের নাম পাল্টে রাখেন রশীদ মঞ্জিল।
সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন পাত্তা দিত না ঋষিকেশ দাসকে। একবার তিনি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় গিয়ে অপমানিত হয়েছিলেন। এরপরই তিনি রোজ গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এ কারণে সে সময় ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে পুরান ঢাকায়। তিনি ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিওকে বাড়িটি ইজারা দেন। হারানো দিন নামের চলচ্চিত্রের শুটিং এই বাড়িতে হয়েছিল। পরে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে মারা যান তিনি। এরপর থেকে তাঁর স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে এই সম্পত্তি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ