Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:৪১ এএম | আপডেট : ২:১৬ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
দেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র অধীনে দক্ষিণ কোরিয়ার ই.ডি.সি.এফ-এর অর্থায়নে নির্মিতব্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের ভিত্তিরপ্রস্তর স্থাপন ও সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চিকিৎসকদের জন্য আরও গবেষণা কেন্দ্র খুলবো যাতে তারা গবেষণার প্রতি আরও জোর দিতে পারেন।
 
তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়  প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করি। এবছর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিয়েছি। সিলেট  মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার প্রস্তাব আজ সংসদে উঠবে এবং পাস করা হবে। এছাড়াও আগামীতে আবারও সরকার গঠন করতে পারলে প্রতিটি বিভাগে সরকারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
 
তিনি বলেন,  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। আর প্রত্যেক বিভাগের অধীনের সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো সেই বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজের অধীন পরিচালিত হবে।
 
চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসকদের নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হবে। মানুষ সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা পাবে এটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে চিকিৎসকদের কাজ করে যেতে হবে।’
 
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে আমরা অনেক বরাদ্দ দিচ্ছি। দেশের মানুষ কম খরচে যেন সেবা পায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে একটি ফান্ড করে দিয়েছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দরিদ্রদের শুধু চিকিৎসা দিচ্ছি না, তাদের আর্থিক সহায়তাও করছি। এই জন্য গঠিত ফান্ডে  ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমি এই ফান্ডে আরও ১০ কোটি টাকা দেবো যাতে দরিদ্ররা চিকিৎসার সুবিধা পায়।’
 
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ও উচ্চতর ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা থাকবে। আর কলেজগুলোতে আন্ডার গ্রাজ্যুয়েট শিক্ষার্থীরা পড়বে। তবে, শুধু নার্সরা আন্ডার গ্রাজুয়েশন করতে পারবে। কারণ আমাদের চিকিৎসাসেবার জন্য আমাদের প্রচুর নার্সের দরকার। আমরা নার্স নিয়োগে বয়স শিথিল করে দিয়েছি যাতে বেশি করে নিয়োগ দেওয়া যায়।’ তিনি ডক্টরস ডরমেটরি নির্মাণের পাশাপাশি নার্সদের জন্য ডরমেটরি নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেন।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা চালু থাকবে। সেই সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রপাতিও এখানে সংগ্রহ করা হবে। মানুষ সেবা পাক এটিই আমাদের লক্ষ্য। ’
 
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে গরিব মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৩০ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যাতে আরও বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠে সে জন্য হাসপাতালের ও চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই চিকিৎসা ব্যবস্থাটা যেন একটা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠে।’
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা  ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছি। আমরা ভীষণ ২১০০ ঘোষণা করেছি।’
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসাখাতে অনেক উন্নতি হলেও চিকিৎসকের ব্যবহার নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রথম বর্ষ থেকে বিহেভিয়ার সংক্রান্ত কোর্স চালু করা দরকার।’
 
বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাসহ জনসাধারণ এখানে সাশ্রয়ীমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পাবেন। এই হাসপাতালে কিডনি ও লিভার  ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুবিধা থাকবে। এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। বিশেষ করে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত হবে। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা গ্রহণ করবে ২  হাজার  থেকে ৪ হাজার রোগী। আন্তঃবিভাগে প্রতিবছর প্রায় ২২ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা পাবেন।’
 
তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স-এর তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য “স্বয়ংসম্পূর্ণ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন” চালু করা, রোগীদের প্রয়োজনে সি ব্লকে আরও ১৭ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ও এইচডিইউ চালু, শিশুদের জন্য পেডিয়েট্রিক আইসিইউ চালুর ব্যবস্থা করা, সাধারণ ইমার্জেন্সি চালু করা, সি ব্লকে পুরানো ওটির সংস্কারসহ শীঘ্রই ১টি বৃহৎ পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড চালু করা এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ ও কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্সদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করা ইত্যাদি পরিকল্পনা রয়েছে।’
 
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি প্রমুখ।
 
বিএসএমএমইউ-এর কেবিন ব্লকের পেছনে নিজস্ব ৩ দশমিক ৮২ একর জমিতে দেশের প্রথম এ সেন্টার বেইজড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। এতে আর্থিক সহায়তা করছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। ২০১৬ সালে ১৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে মোট ১১টি সেন্টার থাকবে। ১৩ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে থাকবে এক হাজার শয্যা।  ২০২১ সালে এ হাসপাতাল উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এক ছাদের নিচেই সবধরনের স্বাস্থ্যসেবা মিলবে।
 


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ