Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শেয়ার বাজারের উন্নয়নে ৭ দফা সুপারিশ

বিএসইসি’র রজত জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজি বাজারের উন্নয়নে ৭ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে বিএসইসিসহ পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থনীতিকে বেগবান, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অবদান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য বিএসইসিসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এর রজত জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো হচ্ছে-দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালুকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর পছন্দের বাসকেট (ঝুলি) সম্প্রসারিত ও বৈচিত্রময় করা, নতুন প্রোডাক্ট চালু করার পূর্বে তার পরিচিতি, পরিচালন প্রক্রিয়া ও কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিতকরণ এবং বিএসইসির প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম জোরদার করে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তৃতকরণ।
সেই সাথে-আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা ও গুরুত্ব, অন্যান্য সেক্টরের সাথে পুঁজিবাজারের আন্তঃসম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত কোম্পনিসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানির শেয়ার লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্মল ক্যাপ বোর্ড চালু করা। তিনি সকল ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিকতরণের পাশাপাশি সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাসহ উল্লেখিত সকল কর্মসূচি ও কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এসব কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের অগ্রগতির ধারা আরও বেগবান হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘আমি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বলব, যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা আমরা চাইনা। পাশাপাশি কমিশন নিয়ন্ত্রক ও সহায়তাকারী উভয় ভূমিকায় পুঁজিবাজার বিকাশে যে ধারা বজায় রেখেছে তা অব্যাহত রাখবে এবং গতিশীল করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতের অন্যতম স্তম্ভ পুঁজিবাজার বিকাশে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। ফলে পুঁজিবাজার আজকের স্থিতিশীল অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দ্রুত বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পুঁজি বাজারের বিকাশে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিএসইসি এর নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আইনি সংস্কারের মাধ্যমে কমিশনের কর্মকর্তাদের পদ-মর্যাদা ও বেতন-ভাতাদিসহ অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংকের সমমানের করেছি। কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে আইনি বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনে কর্মরত সকলের জন্য দেশে-বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করায় বিশ্বে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দ্রæত বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে-তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা। শেয়ার বাজারে লেনদেনে কারচুপি ও অনিয়ম শনাক্তকরণ ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত প্রণোদনা প্যাকেজ এর সফল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। সেই সাথে তার সরকার পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্পেশাল ট্রাইবুনাল এর কার্যক্রম চালু করেছে, আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফাইনানসিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) গঠন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট) রুলস-২০১৫ এর মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, বলেন তিনি।
ফলে তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে এবং বিএসইসি পেয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মান। বেড়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আমাদের বাজারের প্রতি ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবিআই) এবং বিএসইসি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়াম ইতোমধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এ অন্তর্ভুক্তিতে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীসহ, স্টেকহোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকলে উপকৃত হবেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আর্দশকে অনুসরণ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করি। যখনই সরকার গঠন করেছি, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। আমাদের লক্ষ্যই হল দেশের সার্বিক উন্নয়ন।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আবারও সরকার গঠন করার পর থেকে, গত সাড়ে ৯ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করে যাবারও আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. মো. খায়রুল হোসেন বক্তৃতা করেন।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ