পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যেতে ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ ও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেধে দেয়। ১ জুলাই থেকে এই সুদহার কার্যকর করার জন্য সকল ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একাধিকবার ডেকে নিয়ে এই সুদহার বাস্তবায়নের কঠোর নির্দেশ দেয়। তবে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নে বাধ সেধেছেন ৩৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
দেশের মোট ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২২ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার তাদের ব্যাংকে বাস্তবায়ন করেছেন। আর ৩৬ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই বিষয়টা অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও দেশের উন্নয়নকাঙ্খীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকের ঋণের সুদহার দুই অঙ্কে রয়েছে। গত জুলাইয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এবি ব্যাংক বাণিজ্যিক ঋণে সুদ নিয়েছে নয় থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। ব্র্যাক ব্যাংক শিল্পঋণে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ৯ থেকে ১২ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ৯ থেকে ১২ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক ৯ থেকে ১২ শতাংশ, ফারমার্স ব্যাংক ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ, আইসিবি ইসলামিক ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক সাড়ে ১৩ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১১ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিয়েছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক বাণিজ্যিক ঋণে সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংক ১২ থেকে ১৫ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক নয় থেকে ১২ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংক ১২ থেকে ১৫ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংক সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক নয় থেকে ১২ শতাংশ, পূবালী ব্যাংক সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক বাণিজ্যিক ঋণে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বাণিজ্যিক ঋণে নয় থেকে ১২ শতাংশ, সিটি ব্যাংক ১২ দশমিক ২৫ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ ও উত্তরা ব্যাংক বাণিজ্যিক ঋণে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশি নয় ব্যাংকও শিল্প ও বাণিজ্যের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই অঙ্কের সুদ নিয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে টার্ম লোন এবং মিডিয়াম স্কেল ইন্ড্রাস্টি লোন এর সুদের হার।
১ জুলাই থেকে নতুন সুদের হার কার্যকরের কথা থাকলেও তা কার্যকর না হওয়ায়, আবারো সময় বড়িয়ে দেওয়া হয় ৯ আগস্ট পর্যন্ত। দুই দফা সময় বাড়িয়েও অধিকাংশ ব্যাংক সরকারের এ সিন্ধান্ত বাস্তবায়নে চরম অনীহা প্রদর্শন করছে।
তবে ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করতে নজরদারি বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার যাচাইয়ে ব্যাংকে ব্যাংকে পরিদর্শক দল পাঠানো হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
আমানত গ্রহণে ৬ সুদ শতাংশ কার্যকর হলেও হয়নি ঋনের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ হার। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণ করছে কিনা, তা যাচাইয়ে নজরদারি বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত সুদহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়ে স¤প্রতি ব্যাংকগুলোকে চিঠিও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক (পরিদর্শন বিভাগ-১) থেকে ১০টি টিম গঠন করে প্রাথমিকভাবে প্রচলিত ধারার বিভিন্ন ব্যাংকে পরিদর্শক দল পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া দ্রুত শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতেও পরিদর্শক দল পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে তারা কমিটমেন্ট করেছে। সব ব্যাংক এর এমডি এবং সিইও এসে কমিটমেন্ট করে গেছেন। এখন আমরা অবজারভেশনে আছি, তারা যে কমিটমেন্ট করেছে তা ফুলফিল করতে পারছে কি না। কোনো গ্রাহক যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, পরিদর্শনের কাজ চলছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক গুরুত্বসহকারে দেখছে। ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমাদের যে লোনের পোর্টফলিও, তাতে আমাদের ৭৮ শতাংশ ইতিমধ্যেই ওয়ান ডিজিটে ছিলো। আমাদের ফাইট করতে হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশের জন্য।
অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সদস্য হাসিনা নেওয়াজ বলেন, কিছু ব্যাংক তাদের সুদের হার নয় শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বাকী ব্যাংকগুলো সুদের হার নামিয়ে আনতে কাজ করছে।
এফবিসিসিআই এর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সুদের হার নামিয়ে আনার কিছুটা সুফল পাচ্ছি, এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজতেই হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট হবে না।’ ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।