Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলেম-ওলামা ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা কমিটি করুন : বিভিন্ন ইসলামী নেতৃবৃন্দ

পাঠ্যসূচি নিয়ে চক্রান্ত রুখার প্রত্যয়

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান পাঠ্যসূচি ও খসড়া শিক্ষা আইনের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা বলেন, নতুন প্রজন্মের ৯৫ ভাগ মুসলিম ছাত্র যুবকদের ইসলামী চিন্তা-চেতনা ধ্বংস করে ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পতিত সমাজতান্ত্রিক চেতনা করতেই অগ্রহণযোগ্য পাঠ্যসূচি প্রণয়নসহ শিক্ষা আইন করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। তারা বলেন, আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা কমিটি করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে নাস্তিক্যবাদী লেখা সংযুক্ত করে আমাদের ঈমানে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো ইসলাম ধ্বংসে মাঠে নেমেছে। যুব সমাজ এমনিতেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। জাতীয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও মুসলমানদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ইত্যাদি বাদ দিয়ে নাস্তিক ও অন্য ধর্মাবলম্বিদের ভাবধারা সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা সংযুক্ত করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করা হয়েছে। এ ধরনের ইসলাম বিধ্বংসী সিলেবাস বাতিল করে ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ উলামা-মাশায়েখ, দ্বীনদার ইসলামী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সিলেবাস ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, কৌশলে আমাদের আগামী প্রজন্মকে পরিকল্পিতভাবে ধর্মহীন মেধাহীন ও চরিত্রহীন করে দেশকে ধ্বংস করার চক্রান্তে মেতে উঠা নাস্তিক সংখ্যালঘুদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টায় পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মজলিসে আমেলার জরুরি এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী প্রমুখ।
ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট
পাঠ্যসূচিতে সুশিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে সমাজ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হচ্ছে। ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্টের আহ্বায়ক, শাহ্ সূফী সৈয়দ আব্দুল হান্নান আল হাদী বিবৃতিতে একথা বলেছেন। তিনি বলেন, একই কারণে মূল্যবোধ ও বিবেকবোধের অভাবে জাতি রসাতলে যাচ্ছে। পাঠ্যসূচিতে সুনাগরিক হওয়ার জন্য চরিত্র গঠন ও মূল্যবোধের শিক্ষা সন্নিবেশিত না করে বর্তমান সিলেবাসে ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয় বাদ দিয়ে সকল শ্রেণীতে হিন্দুত্ববাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই জাতির জন্য সঠিক শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা করে ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন উলামা ও ইসলামী বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় অনুশাসনের শিক্ষা বাদ দেওয়ায় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি, বয়োজৈষ্ঠদের সম্মান, ছোটদের ¯েœহ, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও পরোপকার ইত্যাদি বিষয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের অন্তরে প্রবেশ করানোর লক্ষ্যে শিক্ষানীতি ও সিলেবাসের আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। তা না হলে যেকোনো উপায় পয়সা উপার্জনের লক্ষ্যই থেকে যাবে। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ অন্যায় সামাজিক ধারায় পরিণত হবে। তাই আমাদের সতর্ক হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা তথা আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতিকে সঠিক লাইনের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ইসলামী ঐক্যজোট
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ইসলামী ভাবধারার মুসলিম লেখকদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক ও গল্প-কবিতার পরিবর্তে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবাদর্শের রচনা, গল্প, নাটক ও কবিতা প্রতিস্থাপনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে বলেছেন যে, বর্তমান শিক্ষানীতির লক্ষ্য হচ্ছে ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পতিত সমাজতান্ত্রিক চেতনা সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিচ্ছায়ারূপী ব্যক্তিরা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঈমান-আক্বিদা, বিশ^াস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বিনাশী প্রবন্ধ-নিবন্ধ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের সর্বশক্তিমান আল্লাহ-তায়ালা ও তাঁর রাসুলের (সা.)-এর প্রতি বিশ^াস থেকে বিমুখ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাঁরা স্বজাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেখেন ব্রাহ্মণ্যবাদী ও নাস্তিক্যবাদী প্রকরণে। তারা সা¤্রাজ্যবাদ, ইহুদিবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বলয়াবৃত্ত। বিভ্রান্ত বিশ^াসের অনুবর্তী এসব লোকদের উপলব্ধিতে বিজাতীয় সম্প্রকাশ ঘটছে।
আইওজে চেয়ারম্যান গতকাল সকালে নেজামে ইসলাম পার্টির পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শিক্ষা-নীতির উপর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এহতেশাম সরওয়ার,  মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, মুফতি এএনএম জিয়াউল হক মজুমদার, আলহাজ ওবায়দুল হক, রবিউল ইসলাম রুবেল ও মাওলানা মাহবুব উল্লাহ, মাওলানা একেএম আশরাফুল হক, মুফতি আবদুল কাইয়ূম, ইসলামী ছাত্র সমাজের সভাপতি আবদুল্লাহ আল-মাসুদ ও মহাসচিব মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে খসড়া শিক্ষা আইনে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা শুধু অনাকাক্সিক্ষত এবং চিরায়ত মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী নয়, বরং এদেশের জনগণের লালিত ও ধারণকৃত চেতনার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ