পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেবাখাতের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির জরিপ
শীর্ষে আইনশৃঙ্খলা সংস্থা,পাসপোর্ট ও বিআরটিএ
শিকার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ
প্রতিবছর সরকার সংশ্লিষ্টরা দেশ থেকে দুর্নীতি ও ঘুষ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও অপ্রতিরোধ্যহারে বেড়ে চলছে দুর্নীতি ও ঘুষ। ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর প্রতিটি সেক্টরই যেন ছেয়ে গেছে দুর্নীতি ও ঘুষের অভিশাপে। ঘুষ ছাড়া কোন কিছুই মিলেনা। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশের ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাতের ওপরে জরিপ করে দুর্নীতি ও ঘুষের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। সংস্থাটির জরিপের তথ্য মতে- ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে দেশের ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ খানা (পরিবার বা ছোট গোষ্ঠীবিশেষ) দুর্নীতির শিকার হয়েছে। দুর্নীতিতে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। সবচেয়ে বেশি মানুষ (৭২ দশমিক ৫ শতাংশ) আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সেবাগ্রহণকালে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর পরেই যথাক্রমে পাসপোর্ট সেবা ও পরিবহন সেক্টরে দুর্র্নীতিতেত দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। পাসপোর্ট সেবায় ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সেবাগ্রহনকালে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস ভবনে টিআইবির কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি, জাতীয় খানা রিপোর্ট-২০১৭’-শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ সব তথ্য তুলে ধরে। দেশে বিদ্যমান ১৬টি সেবাখাতের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা এ তথ্য প্রকাশ করে। একইসময়ে সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার হওয়া সেবাগ্রহীতাদের মতামতের ভিত্তিতে দুর্নীতি কমাতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
জরিপে উঠে আসে, ১৬ সেবাখাতের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়, পাসপোর্ট ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বিআরটিএ-তে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বিচারিক সেবায় ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
২০১৭ সালে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, বিআরটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বীমা, গ্যাস সেবাখাতে এই জরিপ করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা ও পলিসির সিনিয়র প্রোগ্রাাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম, একই বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম।
জরিপে বলা হয়, দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ঘুষ না দিলে কোনো সেবা খাতে সেবা মেলে না। ২০১৭ সালে এ জরিপটি পরিচালিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে টিআইবি এমন একটি জরিপ চালিয়েছিল। তাদের প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জরিপের তথ্য মতে, গত বছর সার্বিকভাবে ঘুষের শিকার (ঘুষ দিতে বাধ্য) হওয়া খানার হার ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘুষগ্রহণকারী তিনটি খাত হচ্ছে- বিআরটিএ (৬৩ দশমিক ১ শতাংশ), আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (৬০ দশমিক ৭ শতাংশ) ও পাসপোর্ট সেবা (৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ)। ২০১৭ সালে খানাপ্রতি গড়ে ৫ হাজার ৯৩০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়কারী খাত হলো- গ্যাস (৩৩ হাজার ৮০৫ টাকা), বিচারিক সেবা (১৬ হাজার ৩১৪ টাকা) ও বিমাখাত (১৪ হাজার ৮৬৫ টাকা)। ২০১৫ সালের তুলনায় এই ঘুষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে গ্যাস, কৃষি ও বিচারিক খাতে। আর কমেছে শিক্ষা, পাসপোর্ট ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান খাতে। এছাড়া ২০১৫ সালের তুলনায় সেবা খাতে ঘুষের শিকার খানার হার কমলেও ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে।
ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার খানার মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা ও তুলনামূলক অর্থের সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আর্থ-সামাজিক অবস্থানভেদে ২০১৭ সালে খানার দুর্নীতির প্রকোপ শহরাঞ্চলের (৬৫ শতাংশ) চেয়ে গ্রামাঞ্চলে (৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ) বেশি। আবার ঘুষের শিকার খানার হার শহরাঞ্চলের (৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ) চেয়ে গ্রামাঞ্চলে (৫৪ শতাংশ) বেশি। গ্রামাঞ্চলে এ হার বেশি হওয়ার মূল কারণ নিরক্ষর বা স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন খানাপ্রধান থাকার কারণে। অর্থাৎ চাকরিজীবী বা শিক্ষিত ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষক, শ্রমিক, জেলে, পরিবহন শ্রমিক বা সাধারণ পেশার মানুষরাই বেশি দুর্নীতির শিকার হয়। এছাড়া যুবক বা ৩৬ ও তদূর্ধ্ব বয়সের সেবাগ্রহীতারা বেশি দুর্নীতির শিকার হয়। কেননা এর চেয়ে কম বয়স্ক মানুষরা প্রতিবাদী হয়। আবার উচ্চ আয়ের মানুষদের তুলনায় নিম্নআয়ের মানুষদের ঘুষ ও দুর্নীতির বোঝা বেশি বইতে হয়। সেবা নিতে গিয়ে উচ্চবিত্তরা তাদের বার্ষিক আয়ের শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ এবং নিম্নবিত্তরা ২ দশমিক ৪১ শতাংশ ঘুষ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দুর্নীতি বাড়ছে এমন কোন তথ্য সঠিক নয়। তবে রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি কমানো এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর বর্তমানে ঘুষ বা দুর্নীতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমন কেউ জামিন পেলে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেই আমরা। কিন্তু যদি বিচারিক কাজকে আমরা এই ধন্যবাদটা দিতাম তাহলে পরিস্থিতি সুন্দর হতো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তরুণরা প্রতিবাদ করতে শিখছে বলে তাদের সঙ্গে দুর্নীতি কম হচ্ছে। সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও কিন্তু পেনশনসহ বিভিন্ন কাজে ঘুষ দিয়ে দুর্নীতির অংশীদার হচ্ছেন।
ফৌজদারি মামলায় কোনো সরকারি কর্মচারীকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না- মর্মে বিধান রেখে স¤প্রতি সরকারি চাকরি আইন, ২০০৮ এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, আইনের চোখে সবার সমান হওয়া উচিত। আমাদের যা আইন আছে তা সময়োপযোগী এবং যথার্থ। তবে তার প্রয়োগের ক্ষেত্রেই আমাদের যত ঘাপলা।
দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবির ১২ সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- ১. দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান আইনের আওতায় আনা ২. বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও কার্যকর ৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুদৃঢ় নৈতিক আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগ ৪. সেবাদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার, তিরস্কার কিংবা শাস্তির ব্যবস্থাকরণ, ৫. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে জনগণের অংশগ্রহনমূলক গণশুনানি কার্যক্রম বাড়ানো ৬. জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও গণমাধ্যমের সক্রিয়তা জোরদার ৭. ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ ও ‘তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন ২০১১’ এর কার্যকর বাস্তবায়নে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি ৮. সেবাদাতা ও গ্রহীতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হ্রাসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি তথা অনলাইন সেবার পরিসর বৃদ্ধি ৯. সেবাগ্রহীতাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া প্রচলন ও কার্যকর করাসহ নাগরিক সনদের কার্যকর বাস্তবায়নকরণ ১০. সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় ধাপ ও অন্যান্য বাধা দূর করা ১১. জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিক্সের ঘাটতি দূরীকরণে সেবাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ১২. দুর্নীতি প্রতিরোধে সব পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সুপারিশ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।