পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেপালে হাসিনা-মোদি বৈঠক অনুষ্ঠিত
সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু
সব ক্ষেত্রে নতুন গতিশীলতার কারণে বৈশ্বিক দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক; এই ত্রিমুখী সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন গতি ও চলমান বাস্তবতার সঙ্গে সমভাবে এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে আমাদের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হতে পারে।
গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাাজায় চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত একুশ বছরে বিমসটেকের কিছু ভালো সাফল্য আছে যদিও আরও বিপুল কাজ আমাদের সামনে পড়ে আছে। দৃশ্যমান ফল পেতে আমাদের বাস্তব সহযোগিতা এগিয়ে নিতে মৌলিক আইনি কাঠামো সংহত করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২০১৬ সালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত বিশেষ বিমসটেক রিট্রিট ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গোয়ায় গৃহীত ১৬ দফা কর্মপন্থার কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে, অনেকগুলো অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।
বিমসটেকের কিছু সদস্য দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে বিদ্যুতের গ্রিড সংযোগের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, অন্যদের অংশগ্রহণে এটি বিমসটেক ইলেকট্রিসিটি গ্রিডে পরিণত হতে পারে।
বিমসটেক থেকে দ্রুত সাফল্য পেতে আরও সমন্বিত, গুরুত্ব প্রদান এবং বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন গুচ্ছ থেকে ১৪টি খাত নির্দিষ্টকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন ও কৃষিখাত থেকে জনগণ সরাসরি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লাভবান হতে পারে যদি এগুলোকে ‘টেকসই উন্নয়ন’ নামে একটি গুচ্ছে শ্রেণিভুক্ত করা যায়। সিকিউরিটি, কাউন্টার টেররিজম, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ‘নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব’ নামে অন্য একটি গুচ্ছের আওতায় আনা হলে সেটি আমাদের সুরক্ষা দেবে,সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবে। ‘পিপল টু পিপল কনট্রাক’ নামে তৃতীয় ক্লাস্টারের আওতায় আমাদের সংস্কৃতি ও জনস্বাস্থ্য আনা হলে সেটি আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
বিমসটেক সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘টুওয়ার্ডস এ পিসফুল, প্রোসপারাস অ্যান্ড সাসটেইনেবল বে অব বেঙ্গল রিজন’। উদ্বোধনে অনুষ্ঠানে আরও ভাষণ দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের চেয়ারপারসন কে পি শর্মা ওলি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাশো সেরিং ওয়াংচুক প্রমুখ।
হাসিনা-মোদি বৈঠক
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) চতুর্থ বিমসটেক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় সম্মেলনের সাইড লাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের এই বন্ধুত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। নরেন্দ্র মোদী বলেন, পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমরা একে অপরের সহযোগিতা চাই। বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হন।
বিমসটেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একসঙ্গে কাজ করলে বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর সবাই অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির বৈঠক
এর আগে গতকাল সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ও নেপাল বিদ্যুৎ খাতের পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে ঐকমত্য হয়েছে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
কাঠমান্ডুর হোটেল কোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় এ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং এ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নির্মূূল করতে চাই। আমরা কেবল আমাদের দেশেরই উন্নয়ন চাই না, আমরা প্রতিবেশীদেরও উন্নয়ন চাই।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য নেপালকে প্রস্তাব দিয়ে কাঠমান্ডুর সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতাও বিনিময় করা যেতে পারে।
অপরদিকে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহযোগিতা জোরদার করতে বিভিন্ন খাতে দু’দেশের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।
পরে ভুটানের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান দাসো সেরিং ওয়াংচুক একই হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয় বলে প্রেস সচিব জানান।
বৈঠকে ভুটানের সরকার প্রধান তার দেশের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী দেশের পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নতুন সরকার শপথ নেবে।
দুই নেতা উভয় দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দিনগুলোতে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। ভুটানের প্রধান উপদেষ্টা তার বাংলাদশের বিক্রমপুরে সফরের কথা স্মরণ করেন।
পরে শেখ হাসিনা ও জোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নেপালের প্রেসিডেন্ট ভবন শীতল নিবাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা সেখানে নেপালের প্রেসিডেন্টের দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৮ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৮৭১।
সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামসসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। এ সময় তাকে গার্ড অব অনারও দেয়া হয়।
অভ্যর্থনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।