পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শাহজালাল যাত্রীধারণ-কার্গো হ্যান্ডিলিং ক্ষমতা হারাচ্ছে
নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রশ্ন তৃৃতীয় টার্মিনাল কতদূর
৩০ বছরের পুরনো রাডারে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে
অত্যাধুনিক শক্তিশালী রাডার ক্রয়ে ৮৫১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী রাডার না থাকায় বিমান অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাত্রীধারণ ও কার্গো হ্যান্ডালিং ক্ষমতাও হারাচ্ছে। অপরদিকে নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়নি তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন) বলছে জাইকার কাছে পাঠানো প্রথম পেইজ-এর প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এদিকে অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী রাডার কেনার জন্য গত মাসে বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ৮০ লাখ এবং কার্গো হ্যান্ডেলিং বছরে ২ লাখ মেট্রিক টন। কার্গো হ্যান্ডলিং ইতোমধ্যে সক্ষমতা হারিয়েছে। চলতি বছর যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি হারানোর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, গত বছরের ১১ জুন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৪টি প্রতিষ্ঠানকে যৌথ পরামর্শক নিয়োগ দেয় বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, জাপানের নিপ্পন কায়ো ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুুরের সিপিজি কনসালটেন্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে। এছাড়া তৃতীয় টার্মিনাল বিস্তারিত ডিজাইন, রিভিউ, মূল নির্মাণ কাজের দরপত্রের খসড়া, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সার্বিক দেখাশুনা করবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকালে কথা ছিল প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের এপ্রিলে।
সূত্র জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বর্তমান কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার, পদ্মা ওয়েল ডিপো স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেয়া জায়গার উপর নির্মিত ভবনগুলো অপসারণ করতে হবে। মূল নির্মাণ কাজ শুরুর আগে এসব স্থাপনা স্থানান্তর ও অপসারণের জন্য কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া কাজের খসড়া তৈরি হলেও রিভিউ শেষ না হওয়ায় দরপত্র আহ্বান করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরেই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হবে এমন নিশ্চিয়তা নেই। দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নেয়া কিছু প্রতিষ্ঠান সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় লিজ নেয়া প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা অপসারণ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা এ কে এম নুরুন্নবী ইনকিলাববে জানান, ৫টি মামলা রয়েছে। আর এসব মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে রায় হলে সঙ্কট কেটে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। টার্মিনালের আয়তন হবে ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এছাড়া র্যাপিড এক্সিট এন্ড কানেকটিং ট্যাক্সি ওয়ে, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে মূল এয়ারপোর্টের সড়কের কানেকটিভিটি তৈরী করা হবে। টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ণ করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বরাত দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করিম ইনকিলাবকে জানান, সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাইকার কাছে প্রথম পেইজ-এর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে। কাজ শুরু হওয়ার ৪২ মাসের মধ্যে শেষ হবে। এটি বড় একটি প্রকল্প। এর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
সিভিল এভিয়েশনের সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে বর্তমানে ব্যবহৃত রাডার বেশ পুরনো ও কমপক্ষে ৩২ বছরের আগে স্থাপন করা। অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী রাডার না থাকায় বিমান অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। নিরাপদ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরে রয়েছে নেভিগেশনাল নানা সুবিধা। রাডারটি পুরনো হওয়ায় বিরূপ আবহাওয়ায় ব্যহত হয় বিমান চলাচল। একই কারণে রাডারের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাচ্ছে অনেক বিমান। ফলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ব্যবহৃত রাডারটি বেশ পুরনো। কয়েক বার রিফার্নিশ করা হলেও বর্তমান সময়ের জন্য এটি উপযোগী নয়। অনেক সময় দক্ষিণ দিক থেকে সবার অজান্তে অনেক এয়ারক্রাফট বেশ নিচ দিয়ে চলে গেলেও দেখা যাচ্ছে না। রানওয়ে দেখতে না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ফ্লাইট দেরি হচ্ছে। লাইটিং সিস্টেমও সেভাবে উন্নত নয়। এখনো আই এল এস ক্যাটাগরি-১ এই রয়েছ। বিমান অবতরণ সহজ করতে হলে রানওয়ের লাইটিং ও যান্ত্রিক অবতরণ পদ্ধতি বা আইএলএস ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করা জরুরি প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে (অ্যারোনটিক্যাল টেলিকমিউনিকেশন) সিএনএস-এটিএন নতুন রাডার স্থাপন ক্রয় প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫১ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পরিচালক উইং কমোডর চৌধুরী জিয়াউল কবির ইনকিলাবকে জানান, নতুন রাডার ক্রয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে অত্যাধুনিক রাডার স্থাপন কাজ শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।