পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ঐতিহ্যবাহী ধানচালের ভাসমান হাটটি জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। নানা সীমাদ্ধতা ও ধান-চালের ব্যবসা অন্যত্র স্থানান্তর হওয়ায় এ হাট কালের পরিক্রমায় এখন বন্ধের পথে। বরিশালের বালাম চালের যে সুখ্যাতি ছিল, তার বড় মোকামই ছিল বানরিপাড়ার এ ভাসমান হাট। সেই বালাম চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হতো বানারীপাড়ায়। ইতিমধ্যে বিলুপ্তির পথে সে বালাম চাল। আর এরই সাথে এ ভাসমান হাটের সুনাম সুখ্যাতিতেও ভাটা পড়েছে। হাটের পরিধি সংকুচিত হয়েছে। দূরদূরান্তের ব্যবসায়ী, কৃষক ও কুটিয়ালরা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে এ হাট থেকে।
বালাম ছাড়াও অন্যান্য চালের চাহিদা ও সুনামের জন্য বিভিন্ন এলাকার শতশত ফরিয়া এখানে চাল কেনাবেচা করত। ব্যবসায়ীরা তাদের এলাকায় উৎপন্ন ধান বিক্রি করতেও বানারীপাড়া হাটে আসত। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ধানচালের ব্যবসার ওপর বানারীপাড়ার অন্যান্য ব্যবসাও নির্ভরশীল ছিল। এ হাটে ও সন্নিহিত এলাকায় চাল উৎপাদনকারী- কুটিয়ালদের সংখ্যা এক সময় ছিল প্রায় ২৫ হাজার। নব্বই দশকের শেষ অবধি ৫ সহস্রাধিক পরিবার এ পেশায় নির্ভরশীল ছিল। উপজেলায় শতাধিক ধান ছাটাই কল-রাইচ মিল ছিল। বানারীপাড়ায় ধানচালের এ ভাসমান হাট বসে শনি ও মঙ্গলবার। তবে আগের দিনের রেশ ধরে রবি ও বুধবারেও ধান-চাল বেচাকেনা হয় এ হাটে। নিকট অতীতেও উপজেলার ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ এ কাজে জড়িত ছিল। হাট থেকে ধান কিনে বাড়িতে নারী-পুরুষ সম্মিলিত শ্রমে তা প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরী করে ভাসমান হাটেই বিক্রি করা হয়। তবে তাদেরকে স্থানীয় মহাজনদের হাতে শোষিত ও বঞ্চিত হওয়ায় ধীরে ধীরে বিকল্প পেশা খুজে নিয়েছে অনেকেই। এক সময় যেখানে বানারীপাড়া বন্দর বাজার, পশ্চিমপাড় দান্ডয়াট থেকে শুরু করে রায়েরহাট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার জুরে নদীতে ভাসমান হাজার হাজার নৌকায় ধান চালের হাট বসত। বর্তমানে বানারীপাড়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীতে ভাসমান চালের হাট এবং নদীর পশ্চিমপাড়ে দান্ডহাটে একইভাবে ধানের হাট বসে। কিন্তু রবি ও বুধবারের হাটকে বলা হয় গালার হাট।
নানা কারনে ১৯৮৯-৯০ সালে মহাজনদের সাথে ব্যাপক সংঘাত বাধে, যা আন্দোলনে রূপ নেয়। যার প্রভাব পড়ে ধান চালের হাটের ওপর। মহাজনদের সাথে কুটিয়ালদের দীর্ঘস্থায়ী বিরোধে সাধারন ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বিভিন্ন জেলা উপজেলা সদরে বিকল্প হাটবাজার গড়ে ওঠে। গত একদশকে কুটিয়াল পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজার থেকে কমে ১ হাজারে নেমে আসে। গত ১৪/১৫ বছর ধরে বানারীপাড়ায় ধানচালের ব্যবসা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বেশিরভাগ কুটিয়ালই তাদের মূলধন হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই নৌকা বিক্রি করে দিয়েছে। আড়ৎদাররা তাদের এ ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। বানারীপাড়া আড়ৎদারপট্টির বহু ঘর এখন ভাড়াটিয়াবিহীন পড়ে আছে। এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখন অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে।
বানারীপাড়ার এ ব্যবসা বন্ধ হওয়ার কারন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসত ধানচাল কেনা বেচার জন্য সেসব স্থানে নতুন মোকাম গড়ে উঠেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাল উৎপাদন হওয়ায় খরচ অনেক কম হয়। সে কারনেই ব্যবসায়ীরা এখন আর বানারীপাড়ায় আসছে না। একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। তবে ভাসমান হাটকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন সাধারন মানুষ। তবে এ ব্যাপারে একাধিক চাল ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, বিগত কয়েক বছর যাবত অধিক মুনাফার লোভে কুটিয়ালরা চালকে নরম করে ছাটাই করে ওজন বৃদ্ধি করছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাশাপশি দূর অঞ্চল থেকে চাল পরিবহন, কমিশন, নিরব চাঁদাবাজি, অতিরিক্ত টোল আদায়, এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের জালিয়াতির কারনেও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আশানুরূপ মুনাফা অর্জিত না হওয়ায় এখন আর ব্যবসায়ীরা বানারীপাাড়ায় আসছেন না। এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায় পূর্ব পুরুষদের এ ব্যবসাকে নিম্নমানের ও কষ্টসাধ্য মনে করে অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকছে। ফলে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বানরিপাড়ার ভাসমান হাটের জৌলুস এখন আর নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।