পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে দেশজুড়ে অঘোষিত বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল। সারাদেশ ছিল কার্যত অচল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সরাসরি এ ধর্মঘটের কথা স্বীকার করেন নি। তারা বলেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাস চালাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশে অঘোষিত এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করে বলেছেন, সড়কে আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। এ পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সে জন্যই রাস্তায় যানবাহন নামছে না।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, বেনাপোলসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ঢাকার চারটি বাস টার্মিনাল থেকে ভোরে কয়েকটি দুরপাল্লার বাস ছেড়ে গেলেও সকাল ৭টার পর পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে কোনো বাস আর ছাড়তে পারেনি। একইভাবে ঢাকার বাইরে থেকেও বাস ছাড়তে গেলে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বাধার মুখে আটকে গেছে।
দুরপাল্লার বাসের পাশাপাশি গতকাল রাজধানীতে সিটি সার্ভিসও বন্ধ ছিল। নগরীতে গণপরিবহন হিসাবে ছিল সিএনজি অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব ও রিকশা। এতে করে হাজার হাজার যাত্রী গণপরিবহন সঙ্কটে সীমাহীন দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন। এই সঙ্কটকে পুঁজি করে এক লাফে বেড়ে গেছে অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া। এমনকি এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাদানকারী উবার ও পাঠাও-এর বিরুদ্ধেও দ্বিগুণ বা তারও বেশি ভাড়া দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, বাস বন্ধের কারণে চাপ বেড়েছে রেলওয়েতে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সবক’টি রুটের ট্রেনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। একই চিত্র ঢাকামুখি ট্রেনগুলোতেও।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিরাপত্তার অভাবে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করার জন্য মন্ত্রীদের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। আহত হয় আরও ১০/১২ জন। নিহতরা হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির দিয়া খানম মিম। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা টানা ৬দিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও ঢাকায় কয়েকটি এলাকায় এই আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
রোববার বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানান। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার পর সোমবার রাস্তায় নেমে আসে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গত ৬দিন ধরে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগ করবেন না বলে তিনি জানান। এরপর বিকাল থেকে মিরপুরে পরিবহন শ্রমিকদের মারমুখি অবস্থানে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশের সঙ্গে মিলে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের পিটিয়েছে।
এদিকে, বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস মাঝপথে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।
শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসে বাধা দেয় শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতারা তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় দুরপাল্লার বাস ও সিটি সার্ভিসের বাস চলাচলে বাধা দেয়া হয়। বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতেই তাদেরকে জানানো হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে যেন কোনো বাস না ছাড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাংরোড বাস স্ট্যান্ডের এক কাউন্টার মাস্টার জানান, সকালে তাদেরকে ফোন করে জানানো হয়েছে দুরপাল্লার বাস চলবে না। কাউন্টার যেন না খোলা হয়। হঠাৎ করে দুরপাল্লার বাস বন্ধের কারণে সারাদেশের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। ঢাকার আশপাশ থেকে জরুরী প্রয়োজনে মানুষ পায়ে হেঁটে অথবা পিকাপভ্যানে চড়ে এসেছে। অনেকে আবার মোটা অঙ্কের ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে এসেছেন।
এদিকে, গতকাল রাজধানীতে সিটি সার্ভিসের বাসও চলেনি। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জিয়া উদ্যান, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, ১০ ও ১১, পল্লবী, কালশী, মগবাজার, প্রগতি সরণি, তেজগাঁও, নাবিস্কো, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, বিমানবন্দর সড়ক, খিলক্ষেত, উত্তরা ও আবদুল্লাহপুরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে তেমন সাধারণ যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে কোনো কোনো সড়কে বিআরটিসি ও ট্রাস্ট পরিবহনের বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এ দুই পরিবহনেরও খুব কমসংখ্যক বাস চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোথাও একটি বাসের দেখা মিললে তাতে ওঠার জন্য শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কিন্তু পাঁচ-ছয়জনের বেশি যাত্রী কোনো বাসেই উঠতে পারছেন না। নারী যাত্রীরা এগিয়ে গেলেও বাসের ধারেকাছেও ভিড়তে পারেন নি তারা।
কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুরজুড়ে প্রধান সড়কগুলোতে এলোপাতাড়ি বাস-মিনিবাস ফেলে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছে। কোনো বাস চলাচল করলে তা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। হান্নান নামে এক বাস চালক জানান, পরিবহন শ্রমিক নেতারাই তাদেরকে বাস চালাতে দিচ্ছেন না।
অপরদিকে, পূর্বঘোষণা ছাড়াই দুরপাল্লার বাস বন্ধ রাখায় আন্ত:জেলা টার্মিনালে গিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। গত পাঁচ দিনে রাজধানীতে অচলাবস্থার মধ্যে আটকে যাওয়া কাজ সারতে যারা বের হয়েছেন, তারাও পড়েছেন দুর্ভোগে। রাস্তায় নেমে বাস না পেয়ে বেশি টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সায়েদাবাদ টার্মিনালে বাসের জন্য কয়েকশ’ মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ফেনীর যাত্রী বিল্লাল হোসেন সকাল থেকে টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, আগে জানলে আমি ট্রেনেই যেতে পারতাম। এখন অসহায়ের মতো বসে আছি। কুমিল্লার যাত্রী বয়োবৃদ্ধ হোসেন আলী বলেন, সরকার ছাত্রদের আন্দোলন ঠেকাতে বাস বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। এর পরিনাম শুভ হতে পারে না। মানুষকে এভাবে কষ্ট দিয়ে অতীতে কেউই টিকে থাকতে পারেনি, এরাও পারবে না।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু সড়কে আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। এ পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সে জন্যই রাস্তায় যানবাহন নামছে না। গতকাল বিকেলে মহাখালী টার্মিনালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন সড়কে নিরাপদ বোধ করবো তখন থেকে গাড়ি নামাবো। এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনও কর্মসূচি নয়। মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, আমরা আইন মেনে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আইন অনুযায়ী দোষীদের যে শাস্তি হবে- আমরা মেনে নেবো।
পরিবহনের নৈরাজ্যের কারণে ফুঁসে ওঠা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে পরিবহন বন্ধ করতে গেলেন কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা তো পরিবহন ধর্মঘটে যাই নাই, চারিদিকে গাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে আমাদের গাড়ি চালাতে পারছি না। চারিদিকে এভাবে অরাজকতা চললে আমরা কীভাবে গাড়ি চালাব?
এদিকে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে বাস মালিক-শ্রমিকেরা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনাল মসজিদে নিহত কলেজ ছাত্রী দিয়া খানমের জন্য দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে এসে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলমও ছিলেন। মন্ত্রী শাজাহান খান বাস চাপায় নিহত আব্দুল করিম রাজিবের আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে তার মাকে সমবেদনা জানান।
তিনি মিম ও রাজিবের পরিবারকে পাঁচ লাখ করে টাকা দেন। নৌমন্ত্রী রাজিবের ছোট ভাই আল আমিনের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য মাসিক অনুদান প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। সন্ধ্যায় মন্ত্রী সিএমএইচে বাস চাপায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ৬ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন।
রাস্তায় আন্দোলনকারীরা নেই, তবুও গণপরিবহন চলছে না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বলেন, এটা কোনো ধর্মঘট নয়। নিরাপত্তার অভাবে গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে আপনার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। কি করবেন আপনি? জবাবে হেসে হেসে বলেন, এটা কোনো বিষয় নয়। ওটা বিএনপি দাবি করেছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বাসের নিরাপত্তার কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা। বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানতেন না। এদিকে টাঙ্গাইল থেকেও সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজশাহীতে প্রবেশ করেনি কোন বাস। রেল স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে মালিক-শ্রমিকরা। অরপদিকে ঝালকাঠী বাস মালিক-শ্রমিকদের একগুয়েমীতে এ জেলার ওপর দিয়ে গত তিন দিন ধরে চলছে না বরিশালসহ অন্য ৩ জেলার কোন বাস। বরিশালে অনেক যাত্রী আটকা পড়ে আছে। মিনিবাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া ও পাথরঘাটাসহ আরো কয়েকটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্নস্থান থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় হাজার যাত্রী বেনাপোল স্থল বন্দরে সকাল থেকে আটকে আছে। বরিশাল-বেনাপোল রুটের পরিবহন কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বেনাপোল-বরিশাল রুটে ২৫টি বাস প্রতিদিন চলাচল করলেও গতকাল সকাল থেকে তার সবই বন্ধ ছিল।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, টানা দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘটে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ। ‘অনিরাপদ’ বোধ করায় বাসের মালিক-শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ রাখায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন এই মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা। নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে বাধ্য হয়েই তাদেরকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। সরেজমিনে নগরীর মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে সারি সারি এনা পরিবহন ও সৌখিন এক্সপ্রেসের বাস। একেবারেই ফাঁকা এই টার্মিনাল। কোন ভিড় নেই যাত্রীদের বন্ধ রয়েছে টিকিট কাউন্টারগুলোও। তবে টার্মিনালের কোথাও কোথাও পঙ্গপালের মতো গাল গপ্প করে বেড়াচ্ছেন শ্রমিকরা। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা জানান, আগে থেকেই যান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ায় যাত্রীরা ট্রেন নির্ভর হয়ে পড়েছেন।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে গণপরিহনে। এতে করে চরম দূভোর্গে পড়েছেন সাধারন মানুষ। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ওরসে আসা মানুষরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গতকাল ভোরে মোনাজাতের মাধ্যমে ওরস শেষ হলেও ফিরতে পারছেন না কয়েক হাজার মানুষ। তাদের সাথে করে নিয়ে আসা যানবাহনগুলোও আটকা পড়েছে। এখন তাদেরকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া, অতিরিক্ত গাড়িভাড়া গুনতে হবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো। এতে দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুমিল্লা থেকে ঢাকা-চট্টগাম-সিলেটসহ ২৭ রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল হঠাৎ করেই জন্য বন্ধ করে দিয়েছে জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন রুটে যান চলাচল করে বলে জানা গেছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা প্রদানের দাবীতে কোন ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকে পটুয়াখালী বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ রাখেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বাস, মিনিবাসসহ দুরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে জেলার সাথে সকল রুটে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কোন ঘোষণা ছাড়াই অভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লার কোন বাস চলাচল করছে না। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুরপাল্লার যাত্রীরা। বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকায় রিকসা ও ব্যাটারী চালিত অটো রিকসায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে স্থানীয় যাত্রীদের।
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবানে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কুষ্টিয়ার চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সকাল ৯টার পর থেকে জেলার সর্বত্র চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এদিকে আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাসস্ট্যান্ডে এসে অনেক যাত্রীকে বিড়ম্বনা ও কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অনেকে বড়িতে ফিরে গেলেও অনেককে আবার ট্রেনের জন্য কুষ্টিয়া এবং পোড়াদহ স্টেশনের দিকে ঝুঁকতে দেখা গেছে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দুরপাল্লার বাসের সাথে অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার রুটে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মাদারীপুর-শরিয়তপুর সড়কের নতুন, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করছে মাদারীপুরের শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। মহা সড়ক দিয়ে ইজিবাইকও চলাচল করতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা।
মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মেহেরপুরে নিরাপত্তা জনিত কারনে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ। যাত্রী, চালক এবং গাড়ীর নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারনে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা ।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোর থেকে সকল রুটের বাসচলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস মিনিবাস মালিক সমিতি। পূর্ব কোন ঘোষনা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকেই নাটোর থেকে সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দূর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা ।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পাবনা ও শাহজাদপুর বাস শ্রমিকদের মধ্যে দ্ব›দ্বকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় দিনেও পাবনা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।