পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘তিন সিটির নির্বাচনে আই এ্যাম স্যাটিসফাইড : কে এম নূরুল হুদা’। শাবাশ সিইসি! অভিনন্দন!! আপনার পছন্দমতো নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়ার জন্য শুধু দেশবাসী কেন আন্তর্জাতিক মহলেরও অভিনন্দন দাবী করতে পারেন। ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশনের নামের সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতে পারে আপনার নামও। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ‘আমার ভোট আমি দেব/ তোমার ভোটও আমি দেব’ শ্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে নির্বাচন কমিশনের ‘আমরা নির্বাচনের আয়োজন করবো/ যাকে খুশি জিতিয়ে দেব’ খুবই অর্থবহ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন সিটির (রাজশাহী-সিলেট-বরিশাল) নির্বাচন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ নৌকা কেউ ধানের শীষের বিজয়ের ব্যাপারে ছিল আশাবাদী। কিন্তু নির্বাচনে কে জিতলো আর কে হারলো তা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মাথাব্যাথা ছিল না। সাধারণ মানুষ ছাড়াও মিডিয়া, সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক মহল সবার প্রত্যাশা ছিল নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়; জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। ইসির নিরপেক্ষ ভুমিকায় জনগণ যেন ভোটের অধিকার ফিরে পায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাটকে সিইসি কথাও দিয়েছিলেন তিন সিটির নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুরের মতো হবে না। সিইসি কী কথা রেখেছেন? তিন সিটির নির্বাচনের চালচিত্র মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর সিইসি’র ‘আই এ্যাম স্যাটিসফাইড’ মন্তব্য কী সাবেক সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদকে লজ্জায় দেয়নি? বিগত নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদকে বলা হতো লজ্জাহীন তল্পিবাহক। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তিনিও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর ৫ দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেন। প্রথম দফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের বিপুল বিজয়ী হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ করা হয়। ভোটের নামে ক্ষমতাসীনদের বায়স্কোপ দেখে কাজী রকিব উদ্দিন ছুটি নিয়ে বিদেশ চলে যান। তার অনুপস্থিতিতে বাকী উপজেলাগুলোর নির্বাচনের নামে ভেল্কিবাজী হয়। কাজী রকিব উদ্দিন যেখানে লজ্জা পান; সেখানে কে এম নূরুল হুদা ‘স্যাটিসফাইড’ হন! এই না হলে তল্পিবাহক আমলা সিইসি!!
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ছিল তিন সিটির নির্বাচনের দিকে। দেশি-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও ছিলেন। কিন্তু সিইসি নূরুল হুদা এবং তাঁর কোনো সহযোগীর কেউ নির্বাচনের দিন তিন সিটির কোনোটিতেই ভোট দেখতে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এই নির্বাচনের ওপর যে নির্বাচন কমিশনের ভারমূর্তির বিষয় জড়িত সেটা রক্ষার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিন সিটিতে ভোটের নামে কি কান্ড হয়েছে মিডিয়ার বদৌলতে দেশ-বিদেশের মানুষ ‘লাইভ’ দেখেছে। অবশ্য সিইসি বলেছেন, ‘মিডিয়ার কথায় বিশ্বাস করি না; প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।’ দুপুরের আগেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন, মেয়র প্রার্থী ভোট না দেয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গে সিইসি বলেছেন, ‘এগুলো তাদের ব্যাপার’। মহা চমৎকার! একেই বলে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন!! নির্বাচনের দায়িত্ব পালনরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সরকারি চাকুরে। প্রশাসন উলঙ্গ দলীয়করণে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অন্যায় আদেশ-নির্দেশ পালনে তারা বাধ্য হন। এদের কেউ বাধ্য হয়ে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে বিতর্কিত ভুমিকা রাখেন কেউ বা অতি উৎসাহী হয়ে রাখেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সিইসি বা চার কমিশনার চাকরি নয়; দায়িত্ব পালন করেন। তারা কেন সরকারকে খুশি করতে তল্পিবাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন?
রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ব্যাপক ভোট কারচুপি, জবরদস্তি ও নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ করেন। ব্যালটের অভাবে তিনি নিজেও ভোট দিতে পারেননি। ১০ টার মধ্যে কমিশনারদের শতকরা ২০ ভাগ অথচ ভৌতিক ভাবে মেয়রের শতকরা ৮০ ভাগ ব্যালট শেষ হওয়ায় তিনি ব্যালটের হিসেব চান। শুধু তাই নয় তিনি একটি ভোটকেন্দ্রের মাঠে সাড়ে চার ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। সবচেয়ে বড় ভেল্কিবাজীর ঘটনা ঘটেছে বরিশালে। দুপুরের মধ্যেই ভোট সম্পন্ন হওয়ায় সেখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী ছাড়া বাকী সব মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। নারী মেয়র প্রার্থীকে নাজেহাল করেন। অবাক কান্ড হলো বরিশালের ভোটের হিসেব। নৌকার প্রার্থীর ১ লাখ ৭ হাজার ভোটে বিজয়ী হন; আর প্রতিপক্ষ ধানের শীষ প্রার্থী পেয়েছে ১৩ হাজার ভোট। অথচ ১৯৭৩ সালের পর এমনকি ২০০৮ সালেও নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে নৌকার প্রার্থী জিততে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপির ভরাডুবি ঘটলেও ধানের শীষ নিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার ‘বরিশাল সদরে’ বিজয়ী হন। সিলেটে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ের পথে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় সেখানে ভোটের নামে কী কান্ড ঘটেছে। সিলেটে ভোট দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন ‘বিএনপির লোকজন না থাকায় তারা কেন্দ্রগুলোতে পুলিং এজেন্ট দিতে পারেনি’। পাঠক কি বুঝলেন? অবশ্য বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে ঘরে ফিরে যান। পরবর্তী কান্ড সবার জানা।
খুলনা সিটির ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল গাজীপুরে জনগণ ভোট দিতে পারবে। সিইসি নূরুল হুদা গাজীপুরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন ‘এখানে (গাজীপুর) খুলনার মতো নির্বাচন হবে না’। দেখা গেল গাজীপুরে ভেল্কিবাজী খুলনাকে পিছনে ফেলে দিল। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টদের নির্বাচনের আগের রাতে গাড়ীতে তুলে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-টাঙ্গাইলে নিয়ে গিয়ে দুপুরে ছেড়ে দেয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্নিকাট গত সাপ্তাহে সিইসির সঙ্গে দেখা করলে তিনি দাবি করেন তিন সিটির নির্বাচন খুলনা-গাজীপুরের মতো হবে না। সত্যিই তা হয়নি। হয়েছে তার চেয়েও খারাপ। কিন্তু সিইসি তিন সিটির নির্বাচনে দারুণ খুশি। তাঁর ভাষায় ‘চমৎকার ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে’। তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে সিইসি যখন খুশি; তখন দেশবাসী কী খুশি না হয়ে পারে? চলুন আমরা খুশিতে ভোটের উৎসব করি; আনন্দ-ফূর্তি করে বাংলা সিনেমার চটুল গান গাই ‘বাঁজাও রামলাল/ ধূর কুরকুর ধিনা তাল/ নাচে গানে মেতে রই/ জীবনটা ---’। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।