Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নৌমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী সংযত হয়ে কথা বলুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর ৬ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আজ মঙ্গলবার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে ডেকে নিয়ে ধমক দিয়েছেন বলে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক মন্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রোববার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বলেন নৌমন্ত্রী। ভারতের মহারাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে তুলনা করেন তিনি। এ কারণে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর এতে বিব্রত হয়ে পড়ে সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেন, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে আরও সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার বিব্রত হয় এমন যেকোনও মন্তব্য পরিহার করতে হবে। কথা বলার সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ না করে মহারাষ্ট্রের সড়ক দুর্ঘটনার রেফারেন্স দেওয়া ঠিক হয়নি। গতকাল সোমবার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে রয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ক্ষমাপ্রার্থনা, বাসচালকদের গ্রেফতার, লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ ইত্যাদি। এসব দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছে তারা।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই অনেকেই আমার পদত্যাগ দাবি করেন। আমি তাদের বলবো, আপনারা যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন বা বলতে পারেন, হ্যাঁ, আপনি ( নৌমন্ত্রী) গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, আমার চলে যাওয়ার তো কোনো অসুবিধা নেই। এর আগেও শহীদ মিনার থেকে অনেকেই আমার এবং তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ সমস্যার সমাধান নয়। বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ্য থেকে তার পদত্যাগের দাবির বিষয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এ কথা বলেন। এর প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে এবং শেওড়ায় রেললাইনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী আহ্বান করলেন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। তখন কিন্তু এই সড়ক পরিবহন শ্রমিকরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, গাড়ি চালু রেখে ছিলেন। এর জন্য ৯২ জন চালক- হেলপারকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের অবদান আছে। মালিকদের এক হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়েছে, তিন হাজারের মতো গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাহলে একটি দেশের প্রতি মালিক-শ্রমিকদের যদি দায়-দায়িত্বই না থাকে, তাহলে আমরা এ ঝুঁকিটা নেবো কেন? এই ঝুঁকির মধ্যে আমি কিন্তু যেখানেই গাড়ি পুড়িয়েছে সেখানেই ছুটেছি। বিভিন্ন জায়গায় ছুটে-ছুটে গাড়িগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি। মন্ত্রী বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শুধু এই সেক্টর নয়, ২০১৩ সালে গার্মেন্টসে জ্বালাও- পোড়াও-ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের পরে আর কোথাও গার্মেন্টস-এ জ্বালাও- পোড়াও হয়েছে? তাহলে আমি এ উদাহরণ দিতে চাই, আমি এখানে আছি বলে অনেক দুর্ঘটনা কমানোর ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করছি।
ঢাকার রাস্তায় যারা মিনিবাস চালায় তারা চরম বিশৃঙ্খলা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি একমত। এটা নিয়ে সিরিয়াসলি আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, আমাদের করণীয় কী। আমরা কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেবো। শুধু বিআরটিএ আর সরকারকে দায়িত্ব দিলে হবে না, আমরা নিজেরাও কিছু দায়িত্ব পালন করতে চাই। সে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা কমাতে পারবো।
তিনি বলেন, আগে অনেক লঞ্চডুবি হতো, শত-শত মানুষ নিহত হয়েছে। আমি তো প্রমাণ করেছি, বিগত সাড়ে তিন বছরে একটাও লঞ্চ ডোবেনি। এটা যদি আমি এখানে করতে পারি, আমি আশা করি, সড়ক-পরিবহন খাতেও আমার প্রচেষ্টা দিয়ে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারবো। রোববারের দুর্ঘটনাটিকে ‘খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে জাবালে নূরের চালকরা দোষী। তদন্তে এটা প্রমাণ হলে জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এটা ঘটেছে বলে পত্র-পত্রিকায় শুনেছি। এই অসম প্রতিযোগিতা আমরা মেনে নেবো না। তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর ৬ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আজ মঙ্গলবার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মন্ত্রীর আত্মীয় কি এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, আমি জানি না ঠিক, আমি জোর দিয়ে বলছি না। এটা তো একটা কোম্পানি। সেখানে ১০ বা ২০ জন মালিক থাকতে পারে। সেখানে আমার কোনো আত্মীয় আছে কি-না তা জানা নেই।



 

Show all comments
  • প্রিতম ৩১ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৪ এএম says : 0
    এরা দল ও সরকার উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৩১ জুলাই, ২০১৮, ২:৩৯ পিএম says : 0
    Eai nao montrir ashkarai poribohon sromikra bepoara....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ