পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন জানিয়ে অবিলম্বে তার সুচিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি করেছে বিএনপি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানিয়ে তিন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গত দুই তিন দিনে জনসমর্থনহীন নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা খুলনা-গাজীপুরের সন্ত্রাসের আবহে নতুন মডেলের ভোট জালিয়াতির আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব বিষয়ে নির্বাচনে কমিশনে হাজারো অভিযোগ দাখিল করলেও কখনো কোনো পদক্ষেপ কমিশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি, মনে হয় তারা চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন।’
আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মান্নান, আবুল খায়ের ভুইয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকাল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা কারাগারে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। তার জ¦র ও শরীরে প্রচন্ড ব্যথা কোনোভাবেই কমছে না। তিনি দর্শণার্থীদের সাথে নিচে নেমে কথা বলেন, কিন্তু এখন তিনি খুব বেশী অসুস্থতার কারণে দোতলা থেকে নিচে নামতেই পারছেন না। এখনো তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তার হাঁটা-চলা করতে কষ্ট হয়। অর্থাৎ তার শারীরিক সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কারাগারে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখার জন্যই তার অসুস্থতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি জানানো হলেও সরকার ভ্রƒক্ষেপহীন ও উদাসীন। যেন শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই তাকে কারাগারের লাল দেয়ালের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। এটা যেন এক ভয়াবহ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশনেত্রীর ওপর সরকার প্রধানের এই প্রতিহিংসা এক অশুভ অপশাসনেরই বার্তা দেয়। আমরা আবারো দলের পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্দয় আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এ কে এম মতিউর রহমান মন্টুকে গভীর রাতে তার রাজশাহীস্থ বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখনো পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করছে না। সিটি নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বারবার বিবেকহীন এই নিষ্ঠুর আচরণের পুনরাবৃত্তি বিএনপি এবং দেশের মানুষের মনে আরো গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। আমি তাকে গ্রেফতার ও গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার অবস্থান নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে রাত-দিন গণগ্রেফতার শুরু করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ধানের শীষের আবেদন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আওয়ামী চেতনায় সাজানো প্রশাসন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ইউরোপে মধ্যযুগীয় ‘ডাইনী শিকার’ এর ন্যায় অভিযানে নেমেছে। খুলনা ও গাজীপুরের স্টাইল গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ক্রমাগত হত্যা করার স্টাইল। সেই স্টাইল ৩০ জুলাই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এখনও বলবৎ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল বেআইনীভাবে জয়ী হতে চাচ্ছে বলেই বেপরোয়া গ্রেফতার, গণগ্রেফতারসহ এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার জন্য গণতন্ত্র মুমূর্ষু হয়ে পড়ে এবং তাতে অবৈধ ক্ষমতার মালিকদের ক্ষমতা সীমাহীনভাবে বেড়ে গিয়ে এক ভয়ঙ্কর অনাচারের রাজত্ব তৈরী হয়। সেজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল, মত, বিশ^াসসহ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে এক ভীতিকর সঙ্কটের মধ্যে নিপতিত হয়।
রিজভী বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীদেরকে জেতাতে তিন সিটি করপোরেশন এলাকাতেই এই গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজশাহীতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অভিযোগ করেছেন- তিনি গতকাল শনিবার সকালে নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের বহরমপুর, দাসপুকার, ডিঙ্গাডোবা ও কড়াইতলা এলাকায় গণসংযোগ করার সময় লক্ষ্য করেছেন যে, সরকার তাদের মনোনীত প্রার্থীকে খুলনা ও গাজীপুর সিটির মতো জয়ী করার জন্য প্রশাসনের সহায়তায় কারসাজী করছে। সরকার দলীয় প্রার্থী প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান করা হচ্ছে। গত পরশু দিন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেয়া তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভোটারদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়াই এই পুলিশী অভিযানের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থীর যাদেরকে এজেন্ট মনোনীত করা হয়েছে, তাদের কারও নামেই মামলা নেই। অথচ গোয়েন্দা পুলিশ ধানের শীষের এজেন্টদেরকে নির্বিচারে আটক করে ১৫/২০ ঘন্টা পর তাদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় অভিযুক্ত করে গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশী এই অনাচার এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকাকে ভীতিকর বিরানভূমিতে পরিণত করে জনশূন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে নৌকা মার্কায় সন্ত্রাসীরা একতরফা অবাধে সিল মারতে পারে। এ বিষয়ে স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করলেও তারা ঠুটো জগন্নাথ হয়ে নিশ্চুপ বসে আছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ ও ভোট প্রার্থনা করেন রাজশাহী ৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী ৫ আসনের এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও শফিকুল ইসলাম শিমুল। গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম হারু, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শিবলী, রাজপাড়া থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম আপেলকে কোন মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই আটক করা হয়। এভাবে ওয়ারেন্ট ছাড়া অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাসিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এবং অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদেরকে জোরপূর্বক ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকী প্রদান করে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
কুখ্যাত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী লোক দ্বারা সমগ্র শহরে ব্যাপকভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদেরকে লাঞ্ছিত, ভয়ভীতি প্রদর্শন, লিফলেট কেড়ে নেয়া ও অফিস ভেঙ্গে ফেলা অব্যাহত রয়েছে।
রিজভী বলেন, আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুরের মতোই ভীতিকর অবস্থায় পরিণত হয়েছে। তিন নির্বাচনী এলাকাতেই বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার, গণগ্রেফতার, ভয়-ভীতি প্রদর্শণ, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা, ধানের শীষের সমর্থক ও এজেন্টদেরকে সাদা পোশাকধারীদের কর্তৃক তুলে নেয়া ও তুলে নেয়ার পর অস্বীকার করার ধুম শুরু হয়েছে। সিলেটে দু’জন নেতাকর্মীকে পুলিশ কর্তৃক রাতে উঠিয়ে নেয়ার পর সকালে অস্বীকার করে। সিলেটে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক নির্বাচনী প্রচারণা বাদ রেখে নিজের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকালও পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
বরিশালেও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়ঘর ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, হয়রানীসহ চলছে গ্রেফতারের হিড়িক। পুলিশী অভিযানে সারা বরিশালে শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বরিশাল জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারী জহিরুদ্দিন মো: বাবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে এভাবে তিন সিটি করপোরেশন এলাকাতেই পুলিশকে দিয়ে এক আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরী করে রেখেছে। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি বরিশাল মহানগরের সহ-সভাপতি এ কে এম শহীদুল্লাহকে পোষ্টার ছেঁড়া ও ছবি ভাংচুরের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশ তাকে নানাভাবে হয়রানী করছে। নির্বাচন কমিশনে দায়েরকৃত কোনো অভিযোগের ব্যাপারে কিংবা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে বিশ^স্ততার সহিত দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন, কিন্তু খুলনা-গাজীপুরসহ চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ঢালাও অনিয়ম ও অনাচারে সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা তছনছ হওয়ার পরেও তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও অপ্রত্যাশিত। শুধু নীরব নয় বরং সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবেও কাজ করছে তারা। ভোট সন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও কমিশনের বক্তব্য অভিন্ন। সরকারী দলের প্রার্থীকে জেতানের জন্য প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডারদের দাপটে ভোটাররা আতঙ্কিত, অথচ এসব বিষয়ে নির্বাচনে কমিশনে হাজারো অভিযোগ দাখিল করলেও কখনো কোনো পদক্ষেপ কমিশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি, মনে হয় তারা চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন। নির্বাচন নিয়ে এই কমিশন এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি, বরং বৃত্তপথেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন নিয়ে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হওয়ার মুহূর্তে বিবেকবান মানুষদের দায় থাকে, চাকরিজীবীদের দায় থাকে না।
এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নে উত্তরে রিজভী বলেন, উন্নয়নের জন্য নয় শিগগিরই দুর্নীতির জন্য শেখ হাসিনা সংবর্ধনা পাবেন। কারণ এই সরকার দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। গতকাল তিনি যে সংবর্ধনা পেয়েছেন তা রাজধানী ঢাকাকে রুদ্ধশ্বাস করে একধরনের আদিখ্যেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।