পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে আমি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তাতে অংশ নিয়েছি। তখন ছাত্রলীগের তকমা গায়ে লাগিয়ে আমি গর্বিত হয়েছি। আর এখন ছাত্রলীগ একটা গালি। গতকাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে শিক্ষক সংহতি সমাবেশে একথা বলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন ওয়াদুদ।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা ও হয়রানী বন্ধ করা সহ শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ করেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকেরা। এ সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ জন শিক্ষক অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশে অধ্যাপক নাসরীন বলেন, স¤প্রতি আমাদের বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষকের নামের ফলকের ওপর কালি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে উপাচার্য ও প্রক্টরকে চিঠি দিয়েছি। তিনি বলেন বর্তমান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হওয়ার যোগ্য নয়।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে এক ঘন্টা সময় নিয়ে কথা বলতেন তাহলেই বুঝতে পারতেন কেন এই আন্দোলন হচ্ছে, কিংবা শিক্ষকদের সাথেও যদি কথা বলতেন তাহলেও বুঝতেন। তিনি ছাত্রলীগেন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ছাত্রলীগ এমন একটা অবস্থা তৈরী করেছে যে ২০১৮ তে দাড়িয়েও আমাদের স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের দশকের এনএসএফের কথা মনে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকমল হোসেন বলেন, আইয়ুব খানের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ ও বর্তমান ছাত্রলীগের মতো শিক্ষার্থীদের এরকম হামলা করতো না। বর্তমান ছাত্রলীগ তার থেকেও ভয়াবহ।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, স্বৈরাচার সরকারেও লজ্জা থাকে, এই সরকারের সেটিও নেই। আমরা নাগরিক নই, প্রজায় পরিণত হয়েছি। তা না হলে এত বড় বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি না কেন? তিনি আরো বলেন, হিটলার কমিউনিস্টদের বেকায়দায় ফেলতে নিজেই পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়েছিল। এখানেও ভিসির বাসায় হামলায় সেটি করা হতে পারে। একই সাথে তিনি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলারও পরামর্শ দেন। এবং ঢাবি প্রক্টরের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন সে কথা ভুলে গিয়ে আপনার দায়িত্ব পালন করুন।’
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে শিক্ষকরাও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে হল গুলোতে দ্বৈত শাসনে অবসান করতে হবে। সেই সাতে বিশ^বিদ্যালয়ে সুষ্ঠ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তির আস্বাদ দেয়ার কথা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে কারাগার বানিয়ে ফেলা হচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, কোটা সংস্কার এর জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। সেই হামলা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গেল শিক্ষকদেরও নানা রকম অপবাদ দেয়া হচ্ছে। আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি উসকানি দিচ্ছিÑএটা অত্যন্ত মিথ্যা কথা। আমরা চাই শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। আমরা সরে যাব না। যতক্ষণ সাধারণের ওপর নিপীড়ন চলবে, আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াব।
সমাবেশ শেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থীদের সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার করতে হবে, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে হবে, ভয় দেখানো ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে, শিক্ষকদের সম্মানজনক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে, শিক্ষাঙ্গনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদের কার্যক্রম চালু করতে হবে।
সমাবেশ থেকে আগামী ২৩ জুলাই সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় বেলা ১১টায় থেকে দিনব্যাপী নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া সহ বুয়েট, জাহাঙ্গীর নগর ও অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক। সমাবেশে শিক্ষকদের পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়ের বভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। সমাবেশ শেষ করে একটি মৌন মিছিল কলাভবন-ডাকসু ভবন প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।