Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেধাকে দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:৫৯ পিএম


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক অনেক মেধাবী। কাজেই সেই মেধাকে আমাদের দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে। আমরা একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই, যেন আগামী দিনেও আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। এজন্য সরকার শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে এবং শিক্ষার বহুমুখীকরণ ও কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে যাতে এই বিশাল জনসংখ্যাকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করা যায়।’

বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সকালে গণভবনে পরীক্ষার ফলাফলের সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) এবং সমমানের আলিম, এইচএসসি কারিগরি, এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) এবং ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ ডিআইবিএস) পরীক্ষা দেশের আটটি শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় গত এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়।

দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন বলেই জাতির পিতা শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরই ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। যার রিপোর্ট তিনি বাস্তবায়ন করে যাওয়ার মত সময় পাননি।

বঙ্গবন্ধুকে ‘৭৫ এ নির্মমভাবে হত্যার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ওই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের ক্ষমতা ভোগ করার দিকে যতটা দৃষ্টি ছিল, দেশ গড়ার দিকে ততটা ছিল না। বাংলাদেশের জনগণ ২১টি বছর এভাবে ভোগান্তির শিকার হয়। আওয়ামী লীগ ‘৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সেই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট নতুন ভাবে তৈরি করে শিক্ষার মান উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় সেই রিপোর্ট পুণরায় পরিত্যক্ত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করে সেই শিক্ষা রিপোর্টের আলোকে যুগান্তকারি শিক্ষনীতিমালা গ্রহণ করতে সক্ষম হই। যার ফলে আজকে শিক্ষাকে মানসম্মত, আধুনিক এবং আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যেন আমরা চলতে পারি সেদিকে লক্ষ রেখেই এই উদ্যোগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা ব্যবস্থা ও ফল প্রকাশ পদ্ধতি সংস্কার, কোর্সগুলোকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন করা এবং মাদ্রাসা ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকেও গুরুত্ব প্রদান করা।

প্রধানমন্ত্রী এসময় ’৯৬ পরবর্তী সরকার গঠনের পর প্রতিটি জেলাকে নিরক্ষর মুক্ত করার উদ্যোগও পরবর্তী মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারার কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার তাদের মেয়াদে শিক্ষার হার না বাড়িয়ে আমাদের রেখে যাওয়া ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশকে কমিয়ে আবার ৪৫ শতাংশে নিয়ে আসে। যেমনটি ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় পেয়েছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে কারিগরি শিক্ষার দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ, কারিগরি শিক্ষা কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি তাঁর সরকার বিজ্ঞান শিক্ষাকেও গুরুত্ব দেয়।

শেখ হাসিনা এ সময় দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করা এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রতিটি গ্রামকে সব রকরমের নাগরিক সুবিধা দিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা। কারণ, সরকার হিসেবে জনগণের সেবা করা এটাই আমাদের কর্তব্য।

কারিগরি ও মাদ্রাসাসহ ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ নিজ নিজ শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ভিডিও কনফানেন্সের মাধ্যমে এই ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান। নেত্রকোনা জেলা এ সময় গণভবনের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিল।

‘সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই’- বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের এই উদ্ধৃতির আলোকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে সেইভাবেই আমরা তাদেরকে গড়তে চাই।’

তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ডিজিটালাইজেশনের কারণে অনেক উন্নত দেশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

এবার আধাঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে কয়েকটি সেটের মধ্য থেকে কোন প্রশ্নের সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা মোবাইল এসএমএস’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে জানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, নকল করতে হবে কেন, একটু মনযোগী হলেই তো পরীক্ষায় পাশ করা যায়।

শিক্ষাকে জীবনের অন্যতম সম্পদ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘এই সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়ে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেনীপেশার মানুষের প্রতি আহবান জানান। বাসস



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ২০ জুলাই, ২০১৮, ৬:১৬ পিএম says : 0
    Eai medhabi satroderkeito satroliger shonar selera hatori o lathi peta kore jiboner jonno ponggu kore dichse....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ