Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইবিতে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ!

ইবি রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস হয়েছে। প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য ২০ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন এক প্রার্থী। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত চক্রের পরিচয়সহ গত শনিবার বেশ কিছু অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। এতে কুষ্টিয়ার এক স্থানীয় প্রার্থী নিয়োগের জন্য ২০ লাখ টাকার লেনদেন করে। এ লেনদেনে প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদত হোসেন আজাদ। তারা ইতিহাস বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং শাখা ছাত্রলীগের সাথে নিয়োগের চুক্তি করেন। এদের মাধ্যমে ট্রেজারার হয়ে ভিসির সাথে ওই প্রার্থীর নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করেন। চাকরি প্রার্থী ও তার স্বামীর ফোন রেকর্ডের এসব তথ্য পুরো ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ওই প্রার্থী নিয়োগ না পেলেও তাদের কথোপকথনে বিভিন্নভাবে জালিয়াতির সাথে জড়িতদের প্রমাণ মিলেছে। এতে জানা যায়, প্রার্থী থেকে জুনিয়র ওই শিক্ষক টাকা নেন। তার থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। রেকর্ডের অংশ বিশেষ--
ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল ও প্রার্থী ফারজানা আক্তারের ১ম রেকর্ড
ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) : আসসালামু আলাইকুম স্যার। বিকুল (বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ) : হ্যা, দেখ বাবু আমি..। ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) : স্যার আমি তো আপনাদের কথা শুনে একদম ডিপেন্ডেবল। কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার (ইতিহাসের সভাপতি) যখন বলল, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম বিশ লাখ টাকাও হাতে ধরিয়ে দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার কেন এমনটা করল? বিকুল (বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক) : আরে বাবু, না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সাথে কেবলই উঠে এলাম। এখন এই জিনিসটা মামুন ভাই (ফারজানার স্বামী) বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি তাকে জানাচ্ছিলাম না। কালকে সিন্ডিকেটের পরে জানাবো। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরো বিব্রত হলাম দেখছি। ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) : জ্বী স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি পার্সেন্ট হয়ে গেছে। অসুবিধা নেই। এর জন্য কোন সত্যতা যাচাইও করতে যাইনি। আপনাকে সাথে সাথে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।
২য় রেকর্ডে ড. বিকুল ও মামুনের কথোপকথন :
বিকুল : হ্যাঁ, মামুন ভাই আমি বলছিলাম, হানিফ (কুষ্টিয়া দুই আসনের সাংসদ) ভাইয়ের ওই ডিও লেটারের কপিটা কার কাছে ? মামুন (ফারজানার স্বামী) : হ্যাঁ, আমার কাছে আছে। বিকুল : আচ্ছা একটু কপিটা নিয়ে আসেন তো। মামুন : আমি টাকা নিতে চাচ্ছি না স্যার আল্লার দোহাই। বিকুল : ধুর ওসব বাদ দেন তো রে ভাই। আপনি আমাকে ডিও লেটারটা দেন তো ভাই। মামুন: ওকে আমি নিয়ে আসতেছি। স্যার এখানে মনে হয় আপনাদের একটু ফল্ট হয়েছে। বেয়াদবি নিবেন না আমি একটু বলি স্যার। সেটা হচ্ছে, আপনি কালকে কিন্তু ইনশিউর করছেন যে, আপনি ছাত্রলীগকে টাকা দেবেন। কিন্তু আমি এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। বললো, ছাত্রলীগ হাতে কোন টাকা না পাওয়ার কারনে কাজ করে নাই। বিকুল: না, আপনি আসেন মুখোমুখি বলছি। ওরা ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) নিয়েছে। ওরা তো এ ক্যান্ডিডেটকে (ফারজানাকে) নেয়নি। মামুন: হ্যাঁ, ওরা ক্যান্ডিডেট নিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যদি টাকাটা দিতেন। বিকুল: আগেই কনফার্ম হয়েছে। আপনি আসেন আমি ফোনে এতো কথা বলতে পারছি না। মামুন: আচ্ছা।
৩য় রেকর্ডে ড. বিকুল এবং মামুনের টাকা ফেরৎ নেবার স্থান নির্ধারণ হয়। এতে রাতের বেলা না নিয়ে সকালে টাকা ফেরৎ নেবার কথা বলেন মামুন। পরে ড. বিকুল তাকে রাতেই কুষ্টিয়া থেকে নিরাপদে বাসায় পৌছে দেবার নিশ্চয়তা দিয়ে ডেকে নেন।
৪র্থ রেকর্ডে লন ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. আজাদ এবং ফারজানারর ফোনালাপ
ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) : আপনি কি আজাদ স্যার বলছিলেন? আমি ফারজানা বলছিলাম, ক্যান্ডিডেট। আজাদ: জি, জি বলো। ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) : কালকে আপনারা এত কিছু করলেন, আমাকে আশ্বস্ত করলেন, আম্মু তোমার চাকরি হয়ে গেছে। তুমি টেনশন করো না। আজাদ : শোন শোন, সে ভাবেই কথাবার্তা ছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীর স্যার বললেন অন্যান্য বোর্ডে ভিসি এভাবে রোল প্লে করে না, জোর করে নেয় না। কিন্তু কালকে ভিসি রংপুরের একটা প্রার্থী নিয়েছে এবং সালেহ স্যারের যে ভাগনী, যেটা নেয়ার কথা ছিল না, যেটার বিষয়ে অনেক কম্পেলেন। রাবির জামায়াতের আমির সালেহ স্যারের শশুর। ওই মেয়েকে প্রক্টর ঢুকিয়েছে। ফারজানা (চাকরি প্রার্থী) :কিন্তু স্যার, আমি আপনাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে টাকা পয়সা সব পে করলাম, কথা সব ঠিক চলছিলো, স্যার আমিতো টাকা পয়সা দিয়েছি ফেরত নেয়ার জন্য নয়, চাকরি নেয়ার জন্য দিয়েছি। আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে টাকাটা দিয়েছি। আপনারা চেয়ারম্যানের উপর চাপ প্রয়োগ করে এটা করবেন। কারন চেয়ারম্যান (ড.জাহাঙ্গীর) স্যার নিজে আমাকে হ্যান্ডেল করেছে। চেয়ারম্যানের নিজের ক্যান্ডিডেট ছিলাম আমি। সে আপনাদের কথা আমাকে বলেছে, না হলে কি আমি আপনাদের পর্যন্ত পৌছাতে পরতাম? আমি সব ডিল করলাম, আমি সব কিছু করলাম।
ফাঁস হওয়া রেকর্ড নিয়ে ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সাথে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি উপকার করতে গিয়ে শত্রু হয়ে গেলাম। এখানে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণই দূরভিসন্ধিমূলক।’ এব্যাপারে ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি জানি না। বিকুল আমার কাছে এক প্রার্থী নিয়ে আসছিল হানিফের সুপারিশ নিয়ে। আমি বিষয়টি দেখবো বলেছিলাম।’ ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমি এর যথাযথ মুলোৎপাটন করবো। দুর্নীতিবাজ কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ