Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যমুনা পাড়ে বন্যা মধ্যাঞ্চলে হুমকি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বন্যা কবলিত হয়েছে যমুনা নদের পাড়। যমুনায় পানি হু হু করে বাড়ছে। বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে। বানের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ভাঙন। একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-জনপদ। বন্যার্ত লাখো মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাত তেমন না হলেও ভারতসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর জনপদের ব্যাপক অংশ বন্যা কবলিত হওয়ার পাশাপাশি বন্যার হুমকিতে রয়েছে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জসহ মধ্যাঞ্চলও। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল (রোববার) সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, যমুনা নদ একটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম এবং দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমায় অবস্থান করছে।
গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ২৯ সেমি নিচে বয়ে যাচ্ছে। উত্তর জনপদের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাগটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আরও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। উজানের ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশের মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা রয়েছে বন্যার হুমকিতে। ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিংরায় গুর, বাঘাবাড়ীতে আত্রাই, মধ্যাঞ্চলের টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদ-নদীর পানি আরও বেড়েছে। ধলেশ্বরী এলাসিনঘাটে বিপদসীমার ৪২ সেমি নিচে রয়েছে। ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে গোয়ালন্দে বিপদসীমার ৭৪ সেমি এবং সুরেশ্বরে ৭০ সেমি নিচে রয়েছে।
প্রধান নদ-নদী প্রবাহের অবস্থা এবং বন্যা পরিস্থিতির পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বগুড়া, জামালপুর এবং সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে যমুনা নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল দেশের নদ-নদীসমূহের ৯৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পায় ৫১টিতে, হ্রাস পায় ৪২টিতে এবং বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয় ৭টি পয়েন্টে। এদিকে উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাতের মাত্রা আপাতত হ্রাস পেয়েছে।
সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, উজানের বৃষ্টিপাত তুলনামুলক কমে যাওয়ায় পাহাড়ি ঢলের মাত্রাও কমে যাচ্ছে সিলেটে অঞ্চলের নদী সমূহে। এতে করে আগামী ৪৮ ঘন্টায় সুরমা, কুশিয়ারা ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমা হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীরন কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, সুরমাকানাইঘাটে এখনো ১১, সুরমা সুনামগঞ্জে ২৯, কুশিয়ারা শেরপুর ও সিলেটে ৪, সুরমা পুরাতন, দিরাই সুনামগঞ্জে ৩৬ সে:মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতির বিদ্যমান অবস্থা উন্নতি হতে পারে বলেও জানা গেছে। এছাড়া গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে জাফলংয়ে ২৯ মিলি মিটার । ভারত অংশে হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে ৪৩, জলপাইগুড়িতে ৩২, দাজিলিংয়ে ২৫ ও শিলচরে ২২ মিলিমিটার।
বন্যার কবলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জনজীবন বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছিল। হুমকির মুখে পড়েছিল যাতায়াত ব্যবস্থা, স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি ঘর সহ নিম্নাঞ্চলের কৃষি জমি তলিয়ে যায়। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায়, নদীর পানি কমছে, একই সাথে নিম্নাঞ্চল সমূহের পরিস্থিতি উন্নতি ঘটছে। রাস্তাঘাট চলাচল উপযোগী হয়ে উঠছে। তবে স্থানীয় কানাইঘাট ও গোয়ানঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বন্যার পানি কমলে, পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। জনজীবন স্বাভাবিক করতে ব্যস্ততা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। গো-খাদ্য নিয়ে সংকটে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। রাস্তা ঘাট নিজ উদ্যোগে মেরামত করছেন ভুক্তভোগী মানুষ। স্কুল কলেজ সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে নতুন করে বন্যার আংশকা বিরাজ করছে। দফায় দফায় বন্যার ছোবলে জীবন মূলত বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ